শরীয়তপুর প্রতিনিধি: গতবছর একটি বাগান থেকে ১৮ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছে কৃষক মো: দলিল উদ্দিন খান। গতবছর লাভের মুখ দেখায় এবছর নতুন করে আরও একটি বাগানে বড়ই চাষ করেন।
এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেন। আগামী কয়েক দিনে আরও প্রায় ১০ লাখ টাকার বড়ই বিক্রির সম্ভবনা দেখে ছিলেন তিনি। দূর্বৃত্তদের চুরির কারনে আজ তার মাথায় হাত!
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মো: দলিল উদ্দিন খান (৬০) তাঁর চার ছেলেকে নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে বলসুন্দর,আপেল ও থাই বড়ই চাষ করে সফলতার মুখ দেখা শুরু করেছেন মাত্র। হঠাৎ একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সফলতা এখন বিফলতায় পরিনত হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে তার প্রতিবেশির সাথে ঝগড়া হলে। প্রতিবেশীরা দলিল উদ্দিন ও তার চার ছেলেসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলে, তাঁরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়ায়। এসময় তারা তাদের বাগান পাহারা দিতে পারেনি। এ সুযোগে গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে একদল দূর্বৃত্ত তাদের বাগান থেকে বড়ই,মাল্টাসহ প্রায় ১১ থেকে ১২ লাখ টাকার ফল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়াও বাগানের বেশ কিছু গাছের ডালপালা ভেঙে রেখে যায়।
কৃষক মো: দিলল উদ্দিন বলেন, আমি আর আমার চার ছেলে মিলে রাতদিন কষ্ট করে জায়গাজমি বিক্রি করে এ ফলের বাগান করি। প্রথম বছর লাভের মুখ দেখে এ বছর আরও একটি নতুন বাগান করি। আল্লাহর রহমতে ফলন হয়েছিল বেশ ভালো। কিন্তু আমার সাথে শত্রুতা করে একটি চক্র আমার ফল গুলো সব লুটে নিয়ে যায়। এবং আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমি সরকারের কাছে এ লুটপাটকারিদের বিচার চাই। আমার ক্ষতি পূরণ চাই।
দলিল উদ্দিনের বড়ো ছেলে ছোলায়মান খান বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে, ঔষধের দোকানে বাকি করে তিলে তিলে এ বাগান করেছি। মাত্র দুই রাতে আমার বাগানের প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ মন বড়ই মাল্টা লুট করে নিয়ে যায়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আমি এ ক্ষতি কি দিয়ে পূরণ করবো। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
সোলায়মান খানের ভাই কৃষক মো: বশির খান বলেন, আমাদের প্রতিটি গাছে বড়ই ছাড়া পাতা দেখা মেলেনি। কিন্তু গত দুই রাতের লুটের কারণে বেশির ভাগ গাছে পাতাই দেখা যায়। তাছাড়া অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে রেখে যায়। আমরা লাখ লাখ টাকা ধারকর্জ করে এ বাগান করেছি। এখন এ ধারকর্জ কি করে পরিশোধ করবো।
নাগেরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মোজাম্মেল খান বলেন, কৃষক দলিল উদ্দিনের দুইটি বাগানের বড়ই লুট হয়েছে শুনে আমি ফোন করে থানায় জানাই। তবে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি চাই প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিদের আইনের আওতায় আনা হোক।
গোসাইরহাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত মো: মোতালেব হোসেন বলেন, নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর গ্রামের অগ্রগামী কৃষক মো: সোলায়মান হুলয়পট্টি এলাকায় সাড়ে তিন একর জমিতে বলসুন্দর,ভারতসুন্দর ও আপেলকুল ও মাল্টার বাগান করেছে। সেখানে প্রায় দেড় হাজার বড়ই গাছ রয়েছে। সে বাগানে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তবে গত দুই রাতে কিছু দুর্বৃত্তরা তার বাগন থেকে বড়ই লুট করে নিয়ে যায় বলে জানতে পারি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুষ্পেন দেবনাথ বলেন, এ ঘটনা আমি শুনেছি। তারা সকালে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Array