• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • মৃত্যুতেও অবিচ্ছিন্ন দম্পতির ভালোবাসার স্মারক 

     বার্তা কক্ষ 
    14th Feb 2024 8:06 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীড়, হায়রে জীবন-নদে?’ প্রকৃতির নিয়ম মেনে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু এমনও কি কোনো মৃত্যু আছে যা মানুষের মনে দাগ কেটে রাখে জীবনভর? আছে। প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য তো শাহজাহান তাজমহল গড়েছিলেন, কিন্তু আজকের গল্পের নায়ক নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন স্ত্রীকে বাঁচাতে।

    ঘটনাটি ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ, চৈত্রের এক দুপুর। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমাকে নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে আসেন। ওই দিনই একটি ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে তারা কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে বের হন। কালবৈশাখীর মৌসুম হওয়াতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে ওঠে শান্ত কাপ্তাই হ্রদ। বাতাসের তীব্র বেগের কারণে তাদের নৌকাটি দুলতে শুরু করে। লিমা ভয় পেয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্ত্রীকে বাঁচাতে আলাউদ্দিনও হ্রদের পানিতে লাফিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কাপ্তাইয়ের অথৈ জলে হারিয়ে যান তারা।

    পরে তাদের খোঁজে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। দু-দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের মরদেহ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২২ মার্চ সকালে রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন-স্পট ঝুলন্ত ব্রিজের অদূরে তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে। মরদেহ দুটি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিল। দেখে মনে হয়েছিল, মৃত্যুও যেন তাদের আলাদা করতে পারেনি। ভালোবাসার এমন বিরল দৃশ্য পার্বত্য শহর রাঙামাটির মানুষদের আপ্লুত করেছিল। চোখের জল ঝরিয়েছিল সব বয়সী মানুষের।

    আলাউদ্দিন-লিমার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যে স্থানে তাদের মরদেহ ভেসে উঠেছিল তার পাশেই রাঙামাটি পলওয়েল পার্কের বিশাল শিশুগাছটির নিচে নির্মিত হয় দেশের প্রথম ‘লাভ পয়েন্ট’। শুধু এই দম্পতিই নয়, সারা পৃথিবীর সব প্রেমিক-প্রেমিকার চিরন্তন ভালোবাসার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে স্থাপনাটি নির্মিত হয়। ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি, দেশের প্রথম এই লাভ পয়েন্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটির পরিকল্পনা ও অর্থায়নে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। লাভ পয়েন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর।

    আলাউদ্দিন-লিমা দম্পতির স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম লাভ পয়েন্টটি সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সারাদেশের মানুষের কাছে। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে স্থানটি। বিশেষ করে দম্পতি কিংবা প্রেমিক যুগল এই লাভ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন হ্রদের জলে মর্মান্তিক মৃত্যু হওয়া আলাউদ্দিন-লিমা দম্পতিকে। পাশাপাশি প্রার্থনা করেন, নিজেদের ভালোবাসার মানুষের সাথে তাদের বন্ধন যেন অটুট থাকে সারাজীবন।

    সিলেট থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সাবির হোসেন বলেন, এই লাভ পয়েন্টের কথা আমি অনেক শুনেছি। এ কারণে স্ত্রীকে নিয়ে দেখতে আসা। লাভ পয়েন্ট সৃষ্টির ইতিহাস জেনে মন খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার এমন নিদর্শন সত্যিই মেলা ভার। তাদের জন্য আমার প্রার্থনা থাকবে।

    সাবির হোসেনের স্ত্রী তানিয়া বলেন, লাভ পয়েন্ট সৃষ্টির পেছনে যে করুণ একটি কাহিনি আছে তা প্রথম ইন্টারনেট থেকে জানতে পারি। পরে এখানে আসার পরিকল্পনা করি। এখানে এসে সত্যিই ভালো লাগছে। পরিবেশটা খুবই সুন্দর। আমিও আশা করি, আমার স্বামী আমাকে সারাজীবন আলাউদ্দিনের মতো আগলে রাখবে।

    বন্ধুদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষ ভালোবাসতে পছন্দ করে। ভালোবাসা ছাড়া জীবন কাটানো কষ্টের। লাভ পয়েন্টটি ভালোবাসারই এক অনন্য উদাহরণ। লাভ পয়েন্ট থেকে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা আমাদের ভালোবাসাকে আরও উজ্জীবিত করব।

    লাভ পয়েন্টের আরেকটি বিশেষত্ব হলো লাভ-লক। নিজেদের ভালোবাসার অমরত্ব প্রার্থনা করে কপোত-কপোতী বা দম্পতিরা এই লাভ পয়েন্টে তালা ঝুলিয়ে তার চাবি কাপ্তাই হৃদের জলে ফেলে দেন। লাভ পয়েন্টে গেলে চোখে পড়বে শত শত তালা ঝুলে আছে। মাঝে প্লাস চিহ্ন দিয়ে কিছু তালায় লেখা আছে দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকার নামের প্রথম অক্ষর। কোনো কোনো তালার গায়ে লেখা আছে ভালোবাসার মানুষের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা। প্যারিসের সিন নদীর উপরের লাভ-লক ব্রিজের ধারণা থেকে এখানেও এমনটি গড়ে তোলা হয়েছে।

    রাঙামাটির স্থানীয় সংবাদকর্মী শংকর হোড় বলেন, কাপ্তাই হ্রদে সেদিন ঝড় উঠেছিল। আলাউদ্দিন-লিমা দম্পতি ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। দু-দিন পর ঠিক এই স্থানে তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে। আমরা তখন দেখেছি, তারা একে-অপরকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, মৃত্যুতেও তারা অবিচ্ছিন্ন। তাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাঙামাটির কয়েকজন তরুণের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় এই লাভ পয়েন্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

    বর্তমানে এটি ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’-তে রূপ নিয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ ছিল। তাজমহলকে যেমন ভালোবাসার নিদর্শন বলা হয়, তেমনি এটিও দেশবাসীর কাছে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে—- মনে করেন তিনি।

    বর্তমানে লাভ পয়েন্টটি রাঙামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে রাঙামাটি পলওয়েল পার্কের ভেতরে অবস্থিত। পোল্যান্ডের ক্রাকো, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, ইতালির ভেনিস, ইংল্যান্ডের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিসসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাভ পয়েন্ট থাকলেও বাংলাদেশে নির্মিত এটিই প্রথম লাভ পয়েন্ট।

    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    February 2024
    M T W T F S S
     1234
    567891011
    12131415161718
    19202122232425
    26272829