শাকিল বাবু, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: আজ ফ্লাগুন মাসের প্রথম দিন। প্রকৃতিতে মৃদু শীতল বাতাস বইলেও আকাশে ছিল রোদের লুকোচির খেলা। সজীব সতেজ মনোরম পরিবশে। সকাল থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্ত-অনুরাগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। নতুন রঙিন পোশাক পরিধান করে দল বেঁধে সকলে এসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরে। কেননা আজ স্বরস্বতী পূজা। বিদ্যার দেবী স্বরস্বতী। তাই শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থীদের কাছে এ পূজার আবেদন আরও অন্যরকম।
বাণী অর্চনা, দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, অঞ্জলি প্রদান, আরতি, প্রসাদ বিতরণসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরে সনাতন সংঘের উদ্যোগে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্বরস্বতী পূজার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকেই শুরু হয় পূজার কার্যক্রম। ঢাকের শব্দে মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় হয় প্রতিমা স্থাপন। আজ সকাল ৯টায় পূজারাম্ভ হয়।
কেন্দ্রীয় মন্ডপে পূজার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। পূজার কার্যক্রমের উদ্বোধ করে উপাচার্য সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে পূজার শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আমরা স্বরস্বতীর দেবীকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরাধনা করে থাকি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এই পূজা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক অধ্যাপিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আপামর জনগণ। আমি সবাইকে এত সুন্দর আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, আইকিউএসি’র অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. তুষার কান্তি সাহা, ত্রিশাল উপজেলা সার্কেল এএসপি অরিত্র সরকার, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সদস্য-সচিব ড. প্রহল্লাদ চন্দ্র দাসসহ অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রীরা। সকাল সাড়ে ১১ টায় পুষ্পাঞ্জলি করা হয়।
কেন্দ্রীয় পূজার বাণী অর্চনা অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে যে যার ধর্ম পালন করলেও উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করেন। সরস্বতী পূজায় শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীর শিক্ষার্থীরাই নয় অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরাও এই সার্বজনীন উৎসবে শামিল হন।
এসময় অন্য বক্তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী কেন্দ্রীয় মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা জোরালো ভাবে তুলে ধরেন। তারা বলেন, সনাতম ধর্মাবলম্বীরা যাতে তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে সেজন্য স্থায়ীভাবে মন্দির নির্মাণ খুব জরুরী।
কেন্দ্রীয় মণ্ডপ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ ও হলের উদ্যোগেও পূজা উদযাপন করা হয়। সারাদিনে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শনার্থীরা এসব পূজামণ্ডপ ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন। দুপুর সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে হয় প্রসাদ বিতরণ। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ৮টায় আরতি প্রতিযোগিতা ও রাত ৯ টায় পুরষ্কার বিতরণ করার মধ্যদিয়ে পূজার কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
Array