নওগাঁ প্রতিনিধি: স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট প্রদান করছেন। অনেক দিন পর ভোট পেয়ে ভোটারদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটের পরিবেশ সুন্দর রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল চোখে পড়ার মতো। অপরদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ করতে গ্রহণ করা হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আজ সকালে ধামইরহাট উপজেলার বড় মইশড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোট প্রদান করেন। এখানে ভোট দেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম। ভোট দেওয়া শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। এভাবে ভোট হলে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
সবার আগে ভোট দিতে আসা ওই কেন্দ্রের নারী ভোটার জেবুন্নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেরিতে ভোটকেন্দ্রে এলে ঝামেলায় পড়ার শঙ্কা থাকে। তাই সকাল সকাল ভোট দিতে ভালো লাগে। ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি।
পত্নীতলার পুঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮৮০ জন। আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি শেষ করে ভোট গ্রহণ শুরু করেছি। আশা রাখি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল প্রদান করতে পার।
পত্নীতলা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৯ হাজার ১১৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ২৭১ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ৮৪৬ জন। নির্বাচনে ৭১ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৪০২ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৮০৪ জন। ভোটের মাঠে ১২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।
অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলায় আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৩০১ জন, নারী ৭৮ হাজার ৭১৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন। নির্বাচনে ৫৩ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৩০৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬০৮ জন। এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। ভোটের দিন পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ৯ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটানিং কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা জানান, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন, সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া গড়ে প্রতি চারটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে পুলিশের মোবাইল টিম রয়েছে। রয়েছে স্ট্রাইকিং টিম ও রিজার্ভ টিম। এর বাইরেও রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ। র্যাব, বিজিবি, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ রয়েছেন নির্বাচনী দায়িত্বে। এক কথায় পুরো এলাকাকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে ভোটারগণ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। কেউ ন্যূনতম কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবার নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। ভোটের মাঠে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ট্রাক প্রতীকের ইঞ্জিনিয়ার আকতারুল আলম, ঈগল প্রতীকের মেহেদী মাহমুদ রেজা ও লাঙ্গল প্রতীকের তোফাজ্জল হোসেন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চারজন থাকলেও মূল লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে।
Array