ওসমানীনগর প্রতিনিধি: বালাগঞ্জ উপজেলার বালাগঞ্জ ইউনিয়নের গোড়াপুর মৌজার অর্ন্তগত সরকারি গোপাটের ভূমি প্রায় ৫০বছর যাবৎ ভোগ দখল করে আসছেন মহানন্দ গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে শাহ্ জাহেদ আহমদ তার পরিবার।
কিন্তু, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পক্ষ এই ভূমি জোর পূর্বক দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ভূমি দখলে বাধা দেয়ায় দখলদার পক্ষ শাহ্ জাহেদ আহমদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এসব বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শাহ্ জাহেদ আহমদ বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ জাহেদ আহমদ বলেন, আমাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন গোড়াপুর মৌজার বিএস দাগ নং-২০’র অন্তর্ভুক্ত সরকারি গোপাট আমাদের দাদা হায়দর আলী জীবদ্দশা কাল থেকে প্রায় ৫০বছর যাবৎ আমরা ভোগ দখল করে আসছি। বিগত দিনে এই গোপাটের ভূমি সরকারি সার্ভেয়ার ও কোর্ট কমিশনারের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
এ সময় উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে এই ভূমিতে লাল নিশান টাঙানো হয়। পাশাপাশি বালাগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতা গ্রামের ময়না খা’র ছেলে সুলতান মিয়া, হাসমত মিয়া ওরফে শুকুর, সুরুজ মিয়া, আয়না মিয়া, আয়না মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া, হুসন খা’র ছেলে মুজির খা, দুলাল খা ও কাদির খা তাদেরকে গাছপালা কর্তনসহ ভোগ দখলে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০২১সালের ৭এপ্রিল সরকারি গোপাটসহ আমার বাড়ির আঙ্গিনার বাঁশ ও গাছ-পালা অন্যায়ভাবে জোর-জুলুম পূর্বক প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কেটে নিয়ে যায় তারা।
শাহ জাহেদ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০জানুযারি পর্যন্ত বাঁশ ও গাছ-পালা যা কেটে নেয়া হয়েছে এর মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা।
শুধু তাই নয়; সরকারি জায়গাতে সুলতান-হাসমতের ভাই চাঁন মিয়ার লাশ জোর পূর্বক কবরও দেওয়া হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারা আমিও আমার পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আক্রমন করে আহত করা হয়েছে বহুবার।
অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়েছে তারা। এসব ঘটনা উল্লেখ করে ২০২১সালের ৮এপ্রিল আমি উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান এবং অভিযুক্তদের গাছ-বাঁশ কাটতে নিষেধ করেন।
শাহ জাহেদ আহমদ অভিযোগ করে আরো বলেন, দখলদাররা জঝড়াটে, পরধনলোভী, সন্ত্রাসী, আইন অমান্যকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী প্রকৃতির লোক। তারা বারবার প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে।
এমনকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট করে আমাকে হেয় পতিপন্ন করা হয়েছে। এসব পোস্টে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে অপমান অপদস্তও করা হয়েছে। যার প্রমাণাদি আমার কাছে রয়েছে।
দখলদারা বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিকি মতাদর্শী। আমি বালাগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের একজন সক্রীয় কর্মী। তারা আমাকে দলীয় কার্যক্রমে বাধা প্রদান করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও তারা নানাভাবে কটুক্তি করে আসছে।
তারা লোক সমাজে বলে বেড়াচ্ছে- সরকারি সার্ভেয়ার কেনো, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এসেও যদি এই ভূমির সীমানা নির্ধারণ করে দেন তবুও তারা মানবে না। কেউ নাকি তাদের কিছুই করতে পারবে না। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে থাকা ২০হাজার টাকা মূল্যের মালিকানাধীন গাছ চুরি করে নিয়ে যায় দখলদাররা।
গাছ কর্তন ও ফেইসবুকে পোস্টের ঘটনায় আমি বাদী হয়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বালাগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করি।
দুটি অভিযোগ দাখিলের পর বালাগঞ্জ থানার এসআই মলাই মিয়া সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাক্ষী প্রমাণ ও এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের জবানবন্দির মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পান।
কিন্তু, বালাগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ বদিউজ্জামান আমার লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি। উল্টো দখলদারা বলে বেড়াচ্ছে, পুলিশের উপর মহলে তাদের হাত রয়েছে, এসব মামলা দিয়ে নাকি তাদের কিছুই করতে পারবো না।
লিখিত বক্তব্যে শাহ জাহেদ আহমদ অভিযোগ করে আরো বলেন, চলতি বছরের ২ফেব্রুয়ারি বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বালাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসা করে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পান। উভয় পক্ষকে সকল কাগজাদি নিয়ে থানায় যাওয়ার কথা বলেন। থানায় উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে গোপাটের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। সীমানা নির্ধারণের বিষয়য়ে ৩শ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে দুই পক্ষের লিখিত অঙ্গিকারসহ স্বাক্ষর দিতে হবে।
দখলদাররা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরবর্তী সময়ে সালিশগণের মাধ্যমে তারা মনগড়া কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। তাদের শর্তমতে না হলে সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে গোপাটের সীমানা নির্ধারণ করা হলেও তা তারা মানবে না। তাদের এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে আমরা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
অন্যদিকে তারা আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা বানোয়াট ও সাজানো মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে দখলদারদের হুমকিতে আমিও আমার পরিবারের সদস্যরা জানমালের নিরাপত্ত্বা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছি। তারা আমাদেরকে প্রাণনাশের ও গুমের হুমকি দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গোড়াপুর গ্রামের সজন মিয়া, চরসুবিয়া গ্রামের দিলাল মিয়া ও গহরমলি গ্রামের মনু মিয়া প্রমুখ।
Array