রংপুর ব্যুরো প্রতিনিধি:উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। উচ্চবিত্তরা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গরম কাপড় দিয়ে শীত নিবারণ করতে পারলেও দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষ। কেউ আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ ছুটছেন পুরোনো কাপড়ের দোকানে। কিন্তু এ বছর ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরোনো কাপড়ের দামও বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
রংপুরের স্টেশন মার্কেট, জামাল মার্কেট, আলমনগর কেজি মার্কেট, সুরভি উদ্যান ফুটপাত মার্কেটের পুরোনো পোশাকের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ভিড়। ব্যবসায়ীরা জানান, পুরোনো কাপড় হলেও এসব কাপড়ের মান ভালো। বিদেশি কাপড় তুলনামূলক সস্তাতে পাওয়ায় এখন ধনী-গরীব সবাই কিনছেন। তবে নিম্ন আয়ের মানুষজনই বেশি কিনে থাকেন এসব পুরোনো কাপড়।
দিনমজুর আব্দুল জব্বার বলেন, ‘হামার তো আর সাধ্য নাই বড় মার্কেট থাকি কাপড় কিনমো। ঠান্ডা আসলে এখান থাকি কাপড় কিনি। বাড়ির সবাইকে কিনি দেই।’ তিনি জানান, এ দোকানগুলোতে কম দামে কাপড় পাওয়া যায় তাই তিনি কেনেন। তবে এ বছর বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে পুরোনো কাপড়।
মোছলেমা আক্তার নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, প্রথমবারের মতো পুরাতন কাপড়ের দোকানে এসেছি। এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর কাপড়ও রয়েছে। সুপার মার্কেটে যেগুলো নতুন কিনলে লাগতো ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা এখানে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে।
মাহিগঞ্জ থেকে পুরাতন পোশাক কিনতে এসেছেন বাদাম বিক্রেতা মজনু মিয়া। তিনি বলেন, শীত আসলে কেজি মার্কেট থাকি কাপড় কিনি। দোকানগুলোতে ঘুরছি। যে দোকানে কম দাম পাবো সেখান থেকেই কিনব। এ বছর দাম বেশি নিচ্ছে। আগে ২৫০ টাকাতেই ভালো কাপড় কিনছিলাম কিন্তু এ বছর ৪০০ টাকাতেও পাচ্ছি না।
আলমনগর কেজি মার্কেটের ব্যবসায়ী মিঠু বলেন, আমার দোকানে সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। মানুষ চাহিদা মতো তাদের কাপড় কেনে। এগুলো পুরাতন কাপড়। অনেক গরীব মানুষ আসে কাপড় কিনতে আমরা এগুলো অনেক কম দামে দিয়ে দেই।
ইয়াসিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি গরম পোশাকের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। গত বছর যে সোয়েটার বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, একই সোয়েটার এবার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। একইভাবে জ্যাকেট, ট্রাউজার, কম্বলসহ অন্যান্য গরম পোশাকের দামও বেশি। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রতিদিন ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
আলমনগর কেজি মার্কেটের সভাপতি আবিদ হোসেন বলেন, আমাদের এই পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে ২০০ দোকান রয়েছে। এসব দোকানের অধিকাংশ কাপড় বিদেশ থেকে আমদানি করা। এগুলো মূলত জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান ও চীন থেকে জাহাজে করে আসে। এরপর চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর কাপড় কিনতে বেশি দাম লাগছে তাই গতবারের তুলনায় কাপড়ের দাম একটু বেশি। তবে শীত বেশি থাকায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৮ থেকে ২০ ডিগ্রিতে। অধিকাংশ দিনই সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে গতকাল বুধবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রংপুর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি। আগামী ২৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
Array