নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের হামলার শিকার হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মৎস ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের (১৫ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। ফিল্ড ট্যুর আয়োজনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের এফআইকিউসি থেকে কোর্স ট্যুর শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় রাত ১১টার দিকে নোয়াখালীর দত্তেরহাটে এ ঘটনা ঘটে।
নোবিপ্রবির ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন এবং মৎস ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক রহমান ইমন বিহিরাগতদের নিয়ে বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামলার শিকার ওই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা আজকে সকালে চট্রগ্রামে যাই আমাদের কোর্স ট্যুরে। সেখানে সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় দত্তেরহাটে আমার বন্ধু তারেক বাস থেকে নেমে যায়। তখন সে বাহির থেকে আমাকে বাস থেকে নামতে বলে। বাস থেকে না নামায় ৭—৮ জন ছেলে নিয়ে আমি এবং আমার বন্ধু মাসুৃম, মুশফিক এবং রিশাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদেরকে অনবরত কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে এবং গালিগালাজ করে। তাদের মারামারির ৫—৭ মিনিট পরে আইসিই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের তুহিন ভাই যোগ দেন। মূলত ওনার নেতৃত্বেই হামলা চালায় তারা।
পূর্ব কোনো বিবাদের জের ধরে এই হামলার সূত্রপাত কিনা তা জানতে চাইলে নাসির আরও বলেন, তারেকের সাথে তাদের পূর্বে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা তখন মিমাংসাও হয়েছিল। আমাদের ট্যুর চলাকালীনও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু আসার সময় সে বাস থেকে নামার সময় এ অতর্কিত হামলা চালায়।
বাসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্রী জানায়, কয়েকজন ছেলে এসে তাদের ব্যাচের কয়েকজন ছেলের ওপর হামলা করে। বাজেভাবে গালিগালাজ ও করে। এমনকি ক্যাম্পাসে গিয়ে মুখ খুললে পরবর্তীতে দেখে নেবেও বলে হুমকি দেয়।
বাসে থাকা সুপারভাইজার বলেন, নোয়াখালীর চৌরাস্তা থেকে প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা তাদেরকে নামিয়ে দিচ্ছিলাম। একইভাবে তাদের একজন দত্তেরহাট নামবে বললে গাড়ি থামানো হয়। গেট খোলার পর দেখি কয়েকজন গাড়িতে উঠে মারামারি শুরু করে।
ট্যুরের দায়িত্বে থাকা বিভাগের শিক্ষকদের একজন সহযোগী অধ্যাপক এ.এফ.এম আরিফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে যাওয়ার পর যখন আমরা নোয়াখালী ফিরছিলাম তখন শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে করতে আসছিল। কারও মাঝে কোনো ঝামেলা বা ঝগড়া—বিবাদ দেখা যায়নি। আমি মাইজদী বাজার ক্রস করার সময় নেমে যাই। তারা শৃঙ্খলভাবে থাকবে বলেও জানায়। কিন্তু হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটবে কখনো আশা করিনি। ঘটনার পরে ছাত্ররা ফোন দিয়ে বললে রীতিমতো আশ্চর্য হই।
অভিযুক্ত একই বিভাগের (১৫তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী তারেকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিভাগের সিআর হিসেবে ব্যাচের অনেক দায়িত্ব আমিই পালন করে থাকি। সে হিসেব অনুযায়ী গতকাল যে আমাদের ব্যাচের ফিল্ড ট্যুর ছিলো সেটাও স্যারের সাথে কথা বলে আমি আয়োজন করি। কিন্তু ট্যুরের আগে গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে বিভাগের সামনে নাসির আমার সাথে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার পেটে লাথি মারে। আমাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরবতীর্তে বিষয়টা আমি আমার বন্ধুদের জানাই। এরপর ট্যুর থেকে আসার সময় বাস দত্তের হাট পৌঁছালে আমি দত্তেরহাট নামার পর বন্ধুরা বাসে উঠে তাদেরকে কয়েকটা চর—থাপ্পর দেয় এবং তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে আমি আমার বন্ধুদের বাস থেকে নামিয়ে দিই। এরপর পাশ দিয়ে তুহিন ভাই যাওয়ার সময় তিনি বিষয়টা দেখে তিনি এসে সবাইকে সরিয়ে দেন এবং বাসকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা এখন আমাদের নামে আরো নানা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি শেষ মুহূর্তে এসে ছিলাম। আমি মাইজদী থেকে দত্তেরহাট পৌঁছালে স্থানীয়দের কাছে শুনি ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাথে ঝামেলা হচ্ছে। একজন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সেখানে যাই এবং ঘটনা শুনে গাড়ি থেকে নেমে এক পক্ষকে ক্যাম্পাসের বাসে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ ঘটনায় বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমারা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র জমা পেয়েছে। শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Array