মো. ওমর ফারুক, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এসব কর্মসূচির প্রকল্প তালিকায় দরিদ্র ব্যক্তিদের নাম থাকলেও বাস্তবে কাজ করানো হচ্ছে বাইরের শ্রমিক দ্বারা। এতে প্রকল্পের বরাদ্দের বড় একটি অংশের ভাগ দিতে হয় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরকে।
এমন ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এভাবে নানা অনিয়মের কারনে কাজের বিনিময়ে টাকা দিয়ে মঙ্গাকালীন কর্মহীন দুঃস্থ, অসহায় মানুষকে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে সৃষ্ট সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মেম্বার, চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একে অপরকে দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রকৃত দরিদ্ররা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তদারকি না থাকায় ও কাজ দেখভাল না করার অভাবে কর্মসৃজন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চর মাইজারী শহিদুল্লাহ গাজীর বাড়ি থেকে নাসির মৃধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজে রবিবার (১৮ ডিসেম্বর ) ২৮ জনের বিপরীতে ১০ জনকে কাজ করতে দেখা গেছে। ওই প্রকল্পের শ্রমিক সরদার ইয়াকুব আলী বলেন, স্থানীয় মহিলা মেম্বার আফসানা বেগমের এর নির্দেশে আমরা ১০ জন কাজ করি। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের ৬ নং ও ৮ নং দুটি ওয়ার্ডে দেখা যায় একই চিত্র।
নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ভদ্রচাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে জাহাঙ্গীর ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে দেখা যায় ৩৭ জন শ্রমিকের মধ্যে ৮ জন কাজ করছেন। ওই প্রকল্পের সরদার হেলাল উদ্দিন খান বলেন, গতকাল ১২ জন ছিলাম আজ অসুস্থতার কারনে ৮ জন কাজ করি। আমরা লেবার মানুষ কতজন কাজ করার কথা এটা মেম্বার ভালো জানে। তবে এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় মেম্বর বলেন, ২০ থেকে ২৫ জন রোজ কাজে হাজির হন। আজ লেবার সবাই আসে নি। আপনি ইউনিয়ন সচিব এর সাথে কথা বলেন। একই ইউনিয়নের ৪ নং ও ১ নং ওয়ার্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রকল্পে ২৫ জনের মধ্যে ৮ জনকে কাজ করতে দেখা যায়। ওই প্রকল্পের শ্রমিকেরা বলেন, তারা শুরু থেকেই ৭/৮ জন কাজ করে আসছেন।
এছাড়াও উপজেলার সামন্তসার, গোসাইরহাট,আলাওলপুর,কোদালপুর,নলমুড়ি,ইদিলপুর,সহ সবকটি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
পিআইও অফিস সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে গোসাইরহাট উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৯২ জন শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: ইকবাল কবির বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে কিছু কাজে অনিয়ম পেয়েছি। সবগুলো ইউনিয়নে এখনো যাওয়া সম্ভব হয় নি। তারপরও প্রকল্পে অনুপস্থিত শ্রমিকের বিপরীতে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, কোনো অনিয়ম বা কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
Array