রাজবাড়ি প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর পাংশায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ‘সন্ধ্যানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া সমবায় সমিতি। উপজেলার আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাগদুলি রোডে আমেরিকা প্রবাসী মোমিন মন্ডলের ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলায় একটি রুম নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালাতো এই সমবায় সমিতি।
গত শনিবার (২৪ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, ১৫-২০ জন ভুক্তভোগী আমেরিকা প্রবাসী মোমিন মন্ডলের বাড়ির সামনে ভিড় করে আছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে সমিতির বই। তারা বই নিয়ে সমিতি থেকে লোন নিতে এসেছিলেন। কিন্তু সমিতির অফিসে এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ।
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মোছা. হাজেরা বেগম বলেন, ২ লাখ টাকা ঋণের আশায় আমি গত বুধবার (২১ জুন) ২০ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) আমার লোন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমিতির অফিসে গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ। আমি ধার করে টাকা দিয়েছিলাম তাদের, এখন আমি এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করব।
একই ইউনিয়নের গৌরাঙ্গপুরের ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। বিনিময়ে আমাকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোন দেওয়ার কথা ছিল। আমি সুদে এনে এই টাকা দিয়েছি। এখন আমার উপায় কী।
পাংশা পৌরসভার মৈশালা এলাকার ভ্যানচালক হেলাল বলেন, ধার করে এনে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম তাদের। আমাকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের অফিসে এসে দেখি তালাবদ্ধ। এখন আমি কি করবো।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ১০-১২ দিন আগে ‘সন্ধ্যানী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে এনজিও সংস্থার লোকজন পাংশা উপজেলা এবং কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে অল্প লাভের বিনিময়ে লোন দেওয়ার কথা বলে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে গ্রাহক প্রতি ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) তাদের লোন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা লোন না দিয়ে প্রতারণা করে পালিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কয়েকশ গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখের অধিক টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এই ভুঁইফোড় এনজিও সংস্থা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, এনজিও সংস্থার লোকজন আনুমানিক ১০ দিন আগে মোমিন মন্ডলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুটি রুম ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষদের বোকা বানিয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। গত বৃহস্পতিবার তারা গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
তারা আরও বলেন, এর সঙ্গে বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মীর সখ্যতা থাকতে পারে। কারণ সে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যেই সমবায় সমিতিটি গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়েছে সেটি ভুয়া সমবায় সমিতি। ওই সমবায় সমিতির নামে আমাদের রেজিস্ট্রারে কোনো নাম নেই। সমিতিতে টাকা রাখার আগে অবশ্যই গ্রাহকদের যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উক্ত বেনামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই সমবায় সমিতিটি ভুয়া। নিবন্ধন নেই। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
Array