বরিশাল ব্যুরো: বরিশালে সাবেক সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল সোমবার (২৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ডের বাঘিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। আহত তরুণীর নাম জান্নাতুল মাহি লাবনী আক্তার। তিনি বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইন বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং ওই এলাকার লাল মিয়ার মেয়ে।
আহত জান্নাতুল মাহি লাবনী বলেন, আমাদের বাসার সামনেই সিটি কর্পোরেশনের ম্যাপভুক্ত চলাচলের পথ। যুগ যুগ ধরেই পথটি এলাকার মানুষ ব্যবহার করে আসছে। সোমবার বিকেলে আমাদেরই প্রতিবেশী সাবেক সার্ভেয়ার মোতালেব হাওলাদার তার লোকজন নিয়ে এসে চলাচলের সেই পথে দেয়াল দিচ্ছিলেন। কী কারণে হঠাৎ দেয়াল দিচ্ছেন তা জানতে ঘর থেকে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি। এ সময় মোতালেব ও তার সহযোগী শাওন, সজল, মানিকের নেতৃত্বে ১৭-১৮ জনের একটি দল এসে গালিগালাজ করতে করতে প্রথমে আমার হাতের মোবাইল নিয়ে নেয়। এরপরই লাথি মেরে আমাকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন শুরু করে।
তিনি বলেন, আমার শরীরে থাকা জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে। শরীরের বিভিন্নস্থানে অশ্লীলভাবে হাত দেয়। মারধরে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে হামলাকারীরা আমাকে মাটিতে ফেলে রাখে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে মোতালেব সার্ভেয়ারের সন্ত্রাসীরা গাড়ি আটকে দেয়। আমাকে যেন হাসপাতালে নিয়ে কোনো চিকিৎসা না দেওয়া হয় সেজন্য তারা গাড়ি আটকে দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িটি ছাড়িয়ে দেয়। সোমবার বিকেলে হাসপাতালে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে সার্ভেয়ারের লোকজন। বলে গেছে, এলাকায় থাকতে হলে তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো কথা না বলি।
আহত তরুণীর মা রুণু বেগম বলেন, আমার মেয়েকে মারধর করতে করতে অজ্ঞান করে মাটিতে ফেলে রাখে মোতালেব সার্ভেয়ারের লোকজন। আমাকেও তারা মারধর করে। পুলিশ এসে হামলার সকল প্রমাণাদি পায়। কিন্তু তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমি সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করি। তখন থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, মারধরের ভিডিও থাকলে তার কাছে নিয়ে যেতে। তিনি তা দেখে তারপরে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন। আজকেও আমি বিকেল ৩টা থেকে থানায় অপেক্ষা করছি। পুলিশ আমাদের কোনো অভিযোগ নিচ্ছে না।
তিরি আরও বলেন, আমরা বাড়িতে ফিরতে পারছি না। পুলিশ সার্ভেয়ারের হয়ে কাজ করছে। থানা থেকে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা পাচ্ছি না। পুরো পরিবার নিয়ে আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ইউনিফর্ম পরিহিত নেই এখন। ইউনিফর্ম ছাড়া কোনো বক্তব্য দেব না। তারা (আহত তরুণীর মা) অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। এছাড়া আমি তাদের বলেছি, যদি তাদের কাছে হামলার ভিডিও থাকে তা যেন দেয় আমাকে। আমি দেখে ব্যবস্থা নিতে পারবো।
প্রসঙ্গত, চাকরিচ্যুত সার্ভেয়ার মোতালেব হাওলাদারের বিরুদ্ধে অপরের জমি দখলের পুরোনো অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কয়েকবার দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, এলাকাভিত্তিক বাহিনী গঠন করে তিনি অন্যের জমি দখল করেন।
Array