গণসংযোগ, মাইকিং আর মিছিলে জমেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণা। একই সঙ্গে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড। পাড়া-মহল্লাগুলোতে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিল প্রার্থীদের প্রাচারণা চলছে পুরোদমে। ফলে নগরজুড়ে এক ধরনের নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, দুপুরের পর থেকে মাইকযোগে প্রার্থীদের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে শোনানো হচ্ছে নানান প্রতিশ্রুতি। বিকেলের পরে পাড়া-মহল্লায় নামছে প্রার্থীদের কর্মীরা। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। এছাড়া পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে আড্ডায় জমে উঠেছে ভোটের আলাপচারিতা। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটের আলাপচারিতায় মুখর থাকছে সবাই।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) নগরীর বুধপাড়া, বিনোদপুর, তালাইমারী, কাজলা, মির্জাপুর, রাণীনগর, সাহেব বাজার, রাণীবাজার, অলোকার মোড়, ভদ্রা, উপশহর এলাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে কর্মীদের। এছাড়া মাইকে প্রার্থীদের নানান গুণের কথা বলে ভোট চাওয়া হচ্ছেন কর্মীরা।
নগরীর বুধপাড়ায় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন মনি মিঞাসহ অন্যরা। তিনি বলেন, আসরের নামাজের পরে আমরা মেয়র প্রার্থী লিটন ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চাচ্ছি। আমরা সিটি মেয়র লিটনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিটন ভায়ের জয়ের জন্য ভোট চাচ্ছি।
নগরীর তালাইমারী এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিল প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন নাহিদ ইসলামসহ অন্যরা। তিনি বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা প্রার্থীর পক্ষে বলছি তিনি রানিং কাউন্সিল। তাকে এবারও নির্বাচনে কাউন্সিল পদে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ওয়ার্ডে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের জন্য প্রার্থীদের মূল্যবান ভোট প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল আজিজ সাজু বলেন, ওয়ার্ডে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আমার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণা চলাচ্ছেন। ওয়ার্ডের ভোটারা নির্বাচনী প্রচার মিছিল করেছে। কর্মীরা ঘুড়ি প্রতীকের পক্ষে ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। জয়ের ব্যপারে আশাবাদী তিনি।
অন্যদিকে, মেয়র পদে চারজন প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মুর্শিদ আলম সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেছেন। বর্তমানে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার।
নির্বাচনী প্রচাররণায় জাতীয় পার্টির স্বপন ও জাকের পার্টির লতিফের কর্মী সমর্থকদের তেমন চোখে না পড়লেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ ছাড়াও এলাকাগুলোতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ^ গোডাউন মাঠে পথসভায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। এরপর সেখান থেকে বারো রাস্তার মোড় পর্যন্ত মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ও সেখানে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
পথসভায় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গণসংযোগ ও পথসভায় যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন। উন্নয়নের প্রতীক নৌকার পক্ষে গণ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী ইতোমধ্যে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহরের গৌরব অর্জন করেছে। রাজশাহীর প্রতি আমার ঋণ রয়েছে। আমার জন্মের এই শহরকে আরও সমৃদ্ধ, আরও উন্নত ও কর্মমুখর করতে কাজ করতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে এই কাজগুলো আমি করতে পারি।
সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। চারলেন সড়ক হয়েছে, সড়কে দৃষ্টিনন্দন বাতি লাগানো হয়েছে, সড়ক বিভাজকে ফুলের বাগান হয়েছে, ওয়ার্ড পর্যায়ে রাস্তা হয়েছে, ড্রেন হয়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে প্রায় আড়াই বছর উন্নয়মূলক কাজ করতে পারিনি। কারণ করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হয়েছে। এরমধ্যে আড়াই বছরে যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে, তা দৃশ্যমান। করোনা মহামারির সময় দফায় দফায় খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। বিনামূল্যে অক্সিজেন, ওষুধসহ সকল সেবা দেওয়া হয়েছে। মানুষের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম, আগামীতে থাকব।
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্রপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ১৫২টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭৩ কক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটারা তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।
Array