জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চল। এমনকি অনেক নাতিশীতোষ্ণ কিংবা শীতপ্রধান দেশেও এ বছর গরম মাত্রা ছাড়িয়েছে। সময়ের অনেক আগেই কড়া নেড়েছে গ্রীষ্মকাল। এই বাড়াবাড়ি রকমের গরম, বৃষ্টির অভাবের নেপথ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকেই দায়ী করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় দেশ স্পেনের আবহাওয়া বরাবরই মনোরম। গরমকালে মাদ্রিদের গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুব বেশি হলেও কখনও ৩৫ ডিগ্রি ছাপিয়ে যায় না তাপমাত্রার পারদ। কিন্তু চলতি এপ্রিলে সব নজির ভেঙে গিয়েছে। স্পেনে গ্রীষ্ম প্রবেশের আগেই তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩৮ ডিগ্রির গণ্ডি। ভরা গ্রীষ্মেও যা অস্বাভাবিক।
এ বছর মূলত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপপ্রবাহের দাপট দেখা গিয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪৪-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর থেকে চিন, ছবিটা সর্বত্রই সমান। এ বছরের গরম কোথাও আগের সব নজির ভেঙে দিয়েছে, কোথাও গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু ৫১ হোক বা ৫৮, কোনও ক্ষেত্রেই তেমন প্রাণহানির নজির নেই। অথচ, এই তীব্র গরম কলকাতা কিংবা দিল্লিতে অনায়াসে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে ৪১ বা ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেই একাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে।
মরুভূমি আর সমতলে তাপের এমন তারতম্য কেন? কেন রাজস্থানে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনীয়, কিন্তু কলকাতায় নয়? নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের কিছু অকাট্য যুক্তি।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে জানানো হয়, কোন অবস্থানে তাপের কেমন প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের ওপর। আর্দ্রতা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। মানুষের শরীর তাপ পায় মূলত সূর্য থেকে। এ ছাড়া শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়, শারীরিক ক্রিয়া থেকে তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে।
শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বাইরে বার করে দেওয়াও প্রয়োজন। ঘামের মাধ্যমে যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। ঘাম বাতাসে মিশে গিয়ে শরীর ঠান্ডা করে। কিন্তু বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে না। কারণ অধিক আর্দ্রতার অর্থ হল, বাতাসে আগে থেকেই জলীয় বাষ্প ভরপুর। তাই আর্দ্রতার কারণে অধিক তাপমাত্রায় মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হয়।
ঘাম শরীর থেকে সমস্ত শক্তি শুষে নেয়। এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপের কারণে মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটাই। সম্প্রতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপের এই প্রাণঘাতী প্রভাব দেখা গিয়েছে।
অন্যদিকে, মরুভূমি বা অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এলাকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কম থাকে। মরুভূমির বাতাসে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই সেখানে তাপমাত্রার পারদ চড়লেও বাসিন্দাদের শরীরে ঘাম হয় কম। শুকনো গরমে সমস্যা হয় ঠিকই, কিন্তু তা থেকে মৃত্যুর নজির কম।
খবরে আরও বলা হয়, মরুভূমি সংলগ্ন এলাকায় যারা থাকেন, তাদের শরীর উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকে। বছরের বেশিরভাগ সময়েই তাদের সঙ্গী খটখটে রোদ আর তীব্র গরম। শরীর তার জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু, নিরক্ষীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের শরীরে তাপ সহনের ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ইদানীং বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা অতীতের নজির ছাপিয়ে যাচ্ছে। ফলে আকস্মিক আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। মরুভূমিতে যে তাপ সহ্য করে দিব্যি দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়, আর্দ্রতার কারণে অন্যান্য অঞ্চলে ওই একই তাপমাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।