বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি ) অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫শ শিক্ষার্থীদের দুধ পান করায় ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ। দুধের সাথে সাথে মাঠা, গুঁড়োদুধ ও পাস্তুরিত দুধ বিতরণ করা হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে।
বৃহস্পতিবার (১লা জুন) দিন ব্যাপী দুধ পান করানোর কর্মসূচি, বর্ণাঢ্য র্যালি ও সেমিনারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিশ্ব দুগ্ধ দিবস।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ‘পুষ্টি ও জীবিকার উৎস হিসেবে পরিবেশ বান্ধব ডেয়রি’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ।
এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আক্তার, আকিজ ডেইরি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উৎযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক হারুর-অর-রশিদ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, দুধ একটি সুষম খাদ্য । দুধে উপস্থিত ল্যাকটোজ মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু কোষ বর্ধনের সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে জাতি যত বেশি দুধ পান করে, সে জাতি ততো বেশি মেধাবী। তাই একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের দৈনিক ২৫০মি.লি দুধের প্রয়োজন। তবে এদেশের মানুষের গড় প্রাপ্যতা প্রায় ২০৮.৭০মি. লি।
তিনি আরও বলেন, ঘাটতি মেটাতে আমদানি করা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকার গুঁড়োদুধ। যার মান নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে দুধের উৎপাদন বাড়লেও জনগণের মধ্যে দুধ পানের আগ্রহ ঐ হারে না বাড়ায় দুগ্ধ খামারীরা দুধ বিক্রিতে সমস্যায় পড়ছেন। তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলে দুধের ব্যবহার ও দুধ পানের অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। প্রচারণার মাধ্যমে জন সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক (অব) এম এ সামাদ বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে দুধ মানসিক রোগীর জন্য খুবই উপকারী। পরিবেশ দূষণ কিংবা বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব খুবই সামান্য। । খাদ্য শস্য উৎপাদনে ৭০% মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় সেখানে দুধ উৎপাদনে ৩০% মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় । অন্যদিকে গোবর আমাদের কৃষির জন্য খুবই জুরুরি। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই।
আড়ং ডেইরির সহকারী সাধারণ পরিচালক ড. মো হারুণ-উর-রশিদ বলেন, ঘাস থেকে গ্লাস (দুধ) এর বিশেষজ্ঞ তৈরি হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই। তবে যুগের বিকাশে দুধের বিকল্প উৎসের প্রতি ঝুকেছে মানুষ। দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। ভারতের জনগণ প্রতিদিন ৩২৯ মিলি দুধ পান করে। মেধা বিকাশে এগিয়ে ভারত।
তিন আরোও বলেন, বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের উদ্দেশ্য হলো সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। দেশের প্রান্তিক খামারীদের দ্বারাই সম্ভব দুধের ঘাটতি মেটানোর। যে পরিমান অর্থ দিয়ে বিদেশে থেকে দুধ আমদানি করা হয় সেই অর্থ প্রান্তিক খামারীদের উন্নয়নে ব্যবহার করলে সম্ভব দেশেই দুধের ঘাটতি মেটানোর।
আকিজ ডেইরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, দুধ নিজের দেশে উৎপাদন করতে পারলে বাইরের দেশে থেকে আমদানি করতে হবে না। ডেইরি শিল্পের প্রধান বাঁধা খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি। আকিজ ডেইরি ২০০৬ সালে প্রোডকাশনে আসে। শুরু থেকেই প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কাজ করে আসছে আকিজ ডেইরিঅ । আগামীতে পশুপালন গ্রাজুয়েটদের আকিজ ডেইরিতে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হবে। এদেশে পনীর প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে। দেশীয় দুধ থেকে তৈরি করা হবে পনীর।
মিল্ক ভিটার সহকারী সাধারণ পরিচালক মির্জা আব্দুল কামাল আজাদ বলেন, খামারীদের নেয্যমূল্য ও দেশের মানুষের দুধের চাহিদা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে মিল্ক ভিটার। । এদেশের প্রান্তিক খামারীদের নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। দুধের চাহিদা মেটাতে শীর্ষে রয়েছে মিল্কভিটা।
ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী বলেন, আজ দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলগুলোতে দুধ পান করানো হয়েছে। এতে করে শিশুরা যেমন দুধ খেতে উৎসাহ পাবে সেই সাথে তাদের বাবা মার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। সুস্থ, সবল ও মেধাবি জাতি গঠনে প্রয়োজন সচেতন নাগরিক। দিবসটি সবার মাঝে একটু হলেও সচেতনা সৃষ্টি করবে।
Array