বরিশাল ব্যুরো প্রতিনিধি:- বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) জনগুরুত্বপূর্ণ ৩নং ওয়ার্ড থেকে জমিজমা বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানকার স্থানীয়রা। এমনকি ওই এলাকার অন্তত তিন হাজার পরিবারের শিশুরা জন্ম থেকেই রোগাক্রান্ত। উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ওষুধ কারখানার বর্জ্যসহ খাবার হোটেলের উচ্ছিষ্ট সব ফেলা হয় ৩নং ওয়ার্ডের পুরানপাড়া সংলগ্ন ময়লাখোলায়। ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ময়লাখোলা ছাড়াও পুরো ওয়ার্ডে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। বেশ কয়েকটি সড়ক ভাঙ্গাচোরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ময়লাখোলার কারণে এলাকার প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাশাপাশি যুবকদের সঙ্গেও বিয়ে দিতে চান না অনেক অভিভাবক।
ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উন্মুক্ত ময়লাখোলার কারণে বাতাস এলেই আশপাশের লোকজন থাকতে পারেন না। ময়লাখোলার উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি করে স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ময়লাখোলা এলাকায় শুকর পালনের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। একটি দলে ১৫৮টি শুকর এখনো আছে। এছাড়া অসংখ্য কুকুর থাকে ওই এলকায়। যেগুলোর কামড়ের ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সিটি কর্পোরেশনের কাছে বললেও কোনো কাজ হয় না। বরং শুষ্ক মৌসুমে ময়লায় আগুন দিলে পুরো এলাকা ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন চারপাশের বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
মাদরাসা শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলাম শুভ্র বলেন, ময়লাখোলার পাশ দিয়ে মাদরাসায় যাওয়ার পর গন্ধে কিছু মুখে নিতে পারি না। দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমাদের প্রায়ই শ্বাসকষ্ট হয়।
পরিতোষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ময়লাখোলায় চোর, গুন্ডা ও নেশাগ্রস্তদের আড্ডা হয় বেশি। আশপাশের লোকজন চলে যাওয়ায় তারা ইচ্ছেমত অপরাধ সংঘটিত করতে পারছে। আশপাশের এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা হাসান বলেন, নতুন মেয়র বা কাউন্সিলর যেই আসুক ময়লাখোলাটাকে হয় অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে নয়তো আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন করার দাবি করছি। আশপাশের মানুষ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। অনেকের বিয়ে আটকে আছে এর জন্য। আত্মীয়-স্বজনরা এই এলাকায় বেড়াতে আসতে চায় না।
পুলিশ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, শীতকালীন আবহাওয়ায় ময়লাখোলায় ভ্যাবসা গন্ধ তৈরি করে। তখন আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অনেকদিনের দাবি ছিল ময়লাখোলাটি সরানোর জন্য। কিন্তু কর্পোরেশন কিছু করছে না। বর্ষা ও শীত এলে গন্ধে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকি। আমাদের সন্তানদের এ্যাজমার সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
এই ময়লাখোলার কারণে ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপুরান পাড়া ও কাউনিয়া থানার সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিসিক শিল্প নগরীর অপরিকল্পিত দেয়াল নির্মাণ করায় এই ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন হয় না। যে কারণে একটু বৃষ্টিতেই ডুবে থাকে ওয়ার্ডবাসী।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ফারুক বলেন, ওয়ার্ডের সড়কগুলো মোটামুটি ভালো আছে। তবে আমার ওয়ার্ডের কোথাও কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। মূলত ওয়ার্ডটি সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিতাংশে হওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
কাউন্সিলর প্রার্থী সালমা আক্তার বলেন, ৩নং ওয়ার্ডের মতাশার, ঘাউয়াসর, হোসনাবাদ, পুরানপাড়া, থানাসড়ক এতবেশি খারাপ যে মানুষ চলাচল করতে পারে না। বিগত ১০ বছরেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। যারা কাউন্সিলর ছিলেন তারা কেন উন্নয়ন করতে পারেনি তা জানি না। আমি নির্বাচিত হলে এই সমস্যাগুলো সমাধানে সবার প্রথমে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
অরেক প্রার্থী মেহেদী হাসান বলেন, জনসেবা করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডের বর্তমান যিনি কাউন্সিলর তিনি মানুষের মাঝে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সুষম বণ্টন করতে পারেননি। আমি নির্বাচিত হলে সুষম বণ্টন করবো। এছাড়া ময়লাখোলা সরানো ও সংড়ক সংস্কারে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত, এই ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার রয়েছে ১০ হাজার ৪৫২ জন। এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, রেডিও প্রতিকে সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক, টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে ফিরোজ মল্লিক, লাটিম প্রতিকে মেহেদী হাসান, ঠেলাগাড়ি প্রতিকে মোস্তাফিজুর রহমান অনিক এবং ঘুড়ি প্রতিকে সালমা আক্তার।
Array