• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির পেছনে কারণ কী? 

     বার্তা কক্ষ 
    26th May 2023 7:36 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার যে হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তা নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। কিন্তু নির্বাচনের আট মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র কেন এ ধরনের হুঁশিয়ারি দিল? কেউ কেউ একটু এগিয়ে এমন প্রশ্নও করছেন—বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত, নাকি এর পেছনে আরও কোন গভীর ‘কৌশলগত’ হিসেব-নিকেশও আছে?

    বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি;
    ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা বেশ কঠোর একটা সিদ্ধান্ত, এবং এখানে একটা খুবই স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এখন দেখবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেখানে কী ঘটে।

    ‘আমার মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন গণতন্ত্র প্রসারের যে এজেন্ডা নিয়েছে— তাতে বাংলাদেশকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে; অর্থাৎ বাইডেন প্রশাসন একটা মূল্যবোধ-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা জোরালোভাবে প্রয়োগ করছে।

    একই কথা বলেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছিল—কিন্তু সে সময় যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন ভূমিকাই নেয়নি। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি মূল্যবোধ-ভিত্তিক ছিল না।

    ‘কিন্তু বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি মূল্যবোধ-ভিত্তিক এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে তারা অগ্রাধিকারের তালিকায় এক নম্বরে রেখেছে।’

    ড. আনোয়ারের মতে নতুন ভিসা নীতিকে এ প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করাটাই সবচেয়ে সঠিক হবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ধারণা খুব উচ্চ নয় বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রনিবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই শিক্ষক-গবেষক।

    ‘বাইডেন সরকার যদি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন আছে বলে মনে করতো – তাহলে নিশ্চয়ই ডেমোক্রেসি সামিটে ঢাকা আমন্ত্রিত হতো,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন ড. আনু আনোয়ার।

    উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত বেশ কিছুকাল ধরেই আমরা দেখছি বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সরকারের ক্র্যাকডাউনের সমালোচনা করেছে, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’

    ‘এখন দেখা যাচ্ছে যে কূটনৈতিক পন্থার বাইরে গিয়ে তারা প্রয়োজনে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ নিতেও ইচ্ছুক, এবং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও অধিকার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও প্রস্তুত,’ বলেন কুগেলম্যান।

    অগ্রিম পদক্ষেপ; প্রশ্ন উঠতে পারে – বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সনাতন কূটনৈতিক পন্থা ছেড়ে এমন একটি ‘হুঁশিয়ারিমূলক’ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে কেন?

    যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্স এন্ড গভর্নমেন্টের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে এই প্রথম কোন দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিসা নীতি নিলো তা নয়।

    অতীতে নাইজেরিয়া ও উগান্ডার মত কিছু দেশের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এটা জানানোর জন্য যে এসব দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া তারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং তাতে তারা নানা অনিয়ম দেখতে পেয়েছে।

    তবে অধ্যাপক রীয়াজ বলছিলেন, অন্য দেশের ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রধানত নির্বাচন হয়ে যাবার পরে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ নীতি নেয়া হলো নির্বাচনের আগে, গুরুত্বটা এখানেই।

    ‘সেদিক থেকে এটা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে একটা ইঙ্গিত যে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা কম।’

    বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই অধ্যাপক আরও বলেন, এ উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্র গত দেড় বছর ধরেই বার বার প্রকাশ করে আসছে।

    ‘এ কারণেই এটা গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটা প্রি-এম্পটিভ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে,’ – বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।

    অন্য কারণ আছে?
    বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পেছনে চীনকে মোকাবিলা করা সংক্রান্ত কৌশলগত কোনো বিবেচনা কাজ করে থাকতে পারে কিনা— প্রশ্নের উত্তরে ড. আনু আনোয়ার বলেন, চীনকে মোকাবিলার সঙ্গে সরাসরি এই নীতির কোনো সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন না।

    ‘এই নতুন ভিসা নীতির সাথে চীনকে মোকাবিলার কোন সম্পর্ক আছে এমনটা এক কথায় বলা চলে না।’ বলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার।

    মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জানে যে বাংলাদেশে চীন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাও অনেক এবং যুক্তরাষ্ট্র সচেতন যে বাংলাদেশ – দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেক দেশের মতই – ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই ভারসাম্য রেখে চলতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং এটাও দেখতে চায়—তারা যেন চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।”

    তার কথায়, ‘ওয়াশিংটনে আজকাল স্ট্র্যাটেজির কথা বললেই তা চীনের সাথে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখা হয়। আমার তো মনে হয় অনেকেই যুক্তি দেবেন যে এ ধরনের (ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের মতো) নীতি নিলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ তা ঢাকাকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হবার দিকে ঠেলে দিতে পারে, বা এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেইজিং ঢাকার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।’

    ‘সেক্ষেত্রে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকুল হবে না। বরং বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর যে কথা আছে- তার আলোকে একে দেখাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়,’  বলেন মি. কুগেলম্যান।

    এছাড়াও অন্য আরেকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন মাইকেল কুগেলম্যান।

    ‘সম্ভবত বাংলাদেশকে ওয়াশিংটন এটা বোঝাতে চাইছে যে তারা কোন বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় – এমন ধারণা সঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশে এমন একটা ধারণা অনেকের আছে যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের বিরোধী, যেহেতু তারা এ সরকারের অনেক সমালোচনা করেছে। কিন্তু এই নতুন ভিসা নীতিতে এটা পরিষ্কার যে এর আওতায় সরকার ও বিরোধীদল উভয়ের লোকেরাই পড়বেন – যদি তারা অবাধ-সুষ্ঠূ নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন।’

    ‘ফলে এটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে এ ধারণা জোরদার করার জন্যই নেয়া হয়েছে,’ বলেন তিনি।

    বাংলাদেশকে বাড়তি গুরুত্ব;
    নাইজেরিয়া বা উগান্ডার তুলনায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহুমাত্রিক, এবং বাংলাদেশকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলে মনে করা হয়।

    ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইছে যে বাংলাদেশে একটা অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক,’ উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই কথাটাকেই তারা এখন একটা নীতি হিসেবে দাঁড় করিয়ে এক ধরনের সতর্কবাণী হিসেবে তুলে ধরে বলছে যে যদি ভোটের সময় কারচুপি, ভীতিপ্রদর্শন, সহিংসতা বা সভাসমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে – তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

    ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতাও আছে – যা মার্কিন জাতীয় স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট।’

    ‘দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে আছে এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ তার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এমন একটা ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিক – যা আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।’

    ‘কারণ চীনের যে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের মতে তা কেবল অর্থনৈতিক নয় তা একধরনের আদর্শও প্রচার করে। বাইডেন প্রশাসনের ভূ-রাজনৈতিক নীতির একটা দিক হলো চীনের বিরোধিতা করা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রচার-প্রসার ও তাকে সংহত করা। সেই জায়গাতেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।’

    কৌশলগত প্রশ্ন এবং চীন

    কিন্তু অনেকে এ ক্ষেত্রে একটা গুরুতর ‘স্ববিরোধিতাও’ কথা তুলে ধরেন।

    তারা বলেন, পৃথিবীতে এমন অনেক দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা দেখা যায় যেখানে গণতন্ত্র বা নির্বাচন বলতে তেমন কিছুই নেই এবং যেসব দেশের মানবাধিকার নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন আছে। ওই দেশগুলোকে ফেলে ওয়াশিংটন হঠাৎ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে কিনা তা নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কেন?

    হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার বলছিলেন, কোথাও গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করে – আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী।

    ‘কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে অর্থে এটা অনুসৃত হয় না, কারণ ভূ-রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে এবং আমার দেখা মতে সবসময়ই ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়,’ বলেন ড. আনোয়ার।

    কিছু বিশ্লেষক আছেন যারা মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মত যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার পেছনে আসল উদ্দেশ্য এই ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থ – গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন বা মানবাধিকার নয়।

    তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব-বলয়ের বাইরে রাখতে চায়।

    বাংলাদেশ অনেক বছর আগেই চীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হয়েছিল।

    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ