কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার গাছপালা। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ উপড়ে পড়ায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সঙ্গে চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ঝড়ে আম, ভুট্টা, গম, ধান, কলাসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, দুই রাতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৭৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন বলেন, কালবৈশাখীতে উপজেলার পারুল, তাম্বুলপুর এবং ইটাকুমারী ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। এছাড়াও তাম্বুলপুর, ছাওলা ও সদর ইউনিয়নের বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এই ছয় উপজেলায় দেড় হাজারেও বেশি বাড়িঘর দুমুড়ে মুচড়ে গেছে। মানুষজনকে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাটের উপর শেকড়সহ হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেসব গাছ অপসারণের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়াও খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
সোম ও মঙ্গলবার (১৫ ও ১৬ মে) রাত থেকে থেমে থেমে আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়, সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টির। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে কাজ করছে।
ইউএনও নাজমুল হক বলেন, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। মানুষজন ভীষণ কষ্টে আছে। তাদের রাতে থাকতে হবে খোলা আকাশের নীচে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়িঘর ধরে ধরে তালিকা করছি। একটি তালিকা ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। সার্বিকভাবে আজ বুধবার (১৭ মে) সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা করা শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন ও এলাকাবাসী সহযোগিতায় এই দুর্যোগে সবাই মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছেন। ঝড়ের আঘাতে বিভিন্ন বয়সী ৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের সময়ে বজ্রপাতে বেশকিছু এলাকায় গরু-ছাগলের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন বলেন, কলবৈশাখীতে শহীদবাগ, কুর্শা, টেপামধুপুর, বালাপাড়া, সারাই ও হারাগাছ ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চর এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। খুঁটি উপড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় তালিকা তৈরি করতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা ছবিসহ বাড়িঘরের তালিকা নিচ্ছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করছেন, তাদের নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। বুধবার তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের হিসাব দেওয়া যাবে।
২৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে ইউএনও তারিন বলেন, শহীদবাগ ইউনিয়নে একটি পিলার পড়ে একজন নারীর মাথা ফেটে গেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তালিকা হওয়া মাত্রই আমরা সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেব।
তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, ঝড়ের কারণে শুধু যে বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়েছে তা নয়, বোরো, আম, কলা ও ভুট্রা আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসল কৃষকরা ঘরে তুলছেন।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাঠে কৃষি বিভাগ ক্ষতির তালিকা তৈরি করছে। পাশাপাশি নুইয়ে পড়া এবং ঝড়ে পড়া ফসলগুলো কিভাবে ঘরে তুলবেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হওয়া মাত্রই তাদের জন্য সরকারি সকল সযোগিতা দেওয়া হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর আশেপাশে যারা আছেন তাদেরআশ্রয় দিয়ে পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন।
Array