কক্সবাজার প্রতিনিধি: অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব থেকে জানমাল রক্ষায় কক্সবাজার উপকূল এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপকূল থেকে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (১৩ মে) সকাল ৮টার দিকে সাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সন্ধ্যার দিকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও মোখার ভয়ে আগে থেকেই সবাই আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন।
এর আগে, শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। পরে আবার শনিবার সকাল থেকে মোখার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া চলছে।
কক্সবাজার জেলা প্রলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া আনোয়ারার বলেন, আমাদের ঘরগুলো সাগরতীরে। যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে আগে থেকে চলে আসছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কি কয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।
সালেহা আকতার নামে সাগর তীরের আরেক বাসিন্দা বলেন, আমার স্বামী পঙ্গু। তাই আগে থেকে চলে আসলাম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে তাকে নিয়ে কোই যাবো। সে তো চলাফেরাও করতে পারে না। টেলিভিশন ও এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হতে পারে, তাই সবকিছু নিয়ে ডিসি স্যারের কার্যালয়ে চলে আসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশসহ অন্যদের মিলিয়ে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে ৫ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জন মানুষ থাকার ব্যবস্থা হবে। আজ শনিবার সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোালা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, সেহেতু বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।
সেনাবাহিনীর পক্ষে মেজর ফাহাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব। এ জন্য আমাদের যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আজকালের বার্তাকে বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।
Array