গ্রীষ্ম মৌসুমে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কয়েকটি গ্রামের নলকূপগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। ফলে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, এ অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানিও। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়াল জোত, ডাঙ্গীবস্তি, সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা উচু হওয়ায় গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে করে অচল হয়ে পড়ে নলকূপ। সংকট দেখা দেয় পানির। হাজারও পরিবারে পানি সংকটে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে পাশের বাড়িতে।
দর্জিপাড়া এলাকার ফিরোজা আক্তার, সিদ্দিক নগরের নুরজাহান ও মনোয়ারাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই মাস ধরে ঠিকমতো টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও পানি মিলছে না। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা পানি পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যে পানি দরকার তা মিলছে না।
নলকূপ মিস্ত্রি ওয়াজেদ আলী বলেন, পঞ্চগড় জেলার মধ্যে তেঁতুলিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় এই সময়য়ে পানির সংকট দেখা দেয়। টিউবওয়েলে পানি থাকে না। আমরা সর্বোচ্চ এখানে ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ স্থাপন করে থাকি। তারপরেও জানুয়ারি থেকেই পানির লেয়ার নামতে শুরু করে। ৬০ ফুট পর্যন্ত লেয়ার নেমে গেছে। এ কারণে এখানকার টিউবওয়েলগুলোয় পানি উঠছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। অসহায়-গরীবদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পুকুর-ঘাট, খাল-বিল ও নদ-নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। পানি নিম্নস্তরে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি কম উঠছে। ৮-১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে শ্যালো মেশিনগুলো সেখানে বসানো হচ্ছে। ইঞ্জিন গর্তে বসানোর পরেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে না। কম পানি উঠছে। এতে করে বোরো আবাদসহ অন্যান্য আবাদেও সেচ খরচ অনেকগুণে বেড়েছে।
তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আমরাও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে এ সমস্যা উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম, তখন পানির প্রথম লেয়ার ৩২ ফুট নিচে নেমে যেতে দেখেছিলাম। বিশেষ করে বরেন্দ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠে না। এখন পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী বলেন, এই সময়ে মাটির গভীরে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় পানির কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ওই সব এলাকার আশেপাশে গভীর নলকূপের কারণে সেচে পানি টানছে। যার কারণে নলকূপে পানি কম মিলছে। তবে যাই হোক, আমাদের উপজেলা প্রকৌশলীকে ওই এলাকাগুলোতে পাঠাবো। তিনি ওয়াটার লেভেলসহ যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট ও বরাদ্দ দিলে সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Array