কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দিনু মন্ডল ও আকতার মন্ডল নামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে হত্যার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
নিহত আকতার মন্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনু মণ্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে আক্তার মন্ডল এবং একইদিন রাতে দিনু মন্ডল মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে চিলমারীতে তাদের মরদেহ এসে পৌঁছানোর পর নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
মঙ্গলবার (২ মে) সকাল ৯টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামে নিহতদের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় ৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, প্রতিপক্ষের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একই গ্রামের ফারুক মণ্ডল (২২) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং জখম ও দগ্ধ প্রায় ১০ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মরদেহ নিয়ে করা মিছিলে এক বিক্ষোভকারী বলেন, পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিনু ও আকতার মন্ডলকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজনরা জানান, পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল ঢাকায় মারা গেছে। এ সময় হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রতিপক্ষের পেট্রোল বোমার আগুনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে ও প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। যে রাস্তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। সেই সমস্যা নিয়ে আমি তিনবার বৈঠক করেছি। সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু একটা পক্ষ শান্তি ও সমাধান চাইনি। তারা বাড়িঘরে আগুন দিয়ে দুটি মানুষকে হত্যা করল। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তি চাই। এ সময় নিহত ও আহতদের পরিবারসহ উপস্থিত এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, অগ্নিদগ্ধ আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় ২১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের ওপর হামলা ও বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। এতে ৫ জন গুরুতর দগ্ধসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিন রাতে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের সবাইকে জামিনও দিয়েছেন আদালত। জামিনের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
Array