পাকিস্তানে বাবা-মায়েরা এখন তাদের মৃত কন্যাদের ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কবরে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন
পাকিস্তানে বাবা-মায়েরা এখন তাদের মৃত কন্যাদের ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কবরে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন। সন্তানের মৃতদেহকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাতে কবরস্থানের চারপাশে লোহার খাঁচা তৈরি করে দিচ্ছেন তারা। এমন রোমহর্ষক ঘটনার তথ্য সামনে এনেছে দেশটির দৈনিক ডেইলি টাইমস।
‘কবরে অনিরাপদ’ শিরোনামে ডেইলি টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়ার ঘটনা বাড়ছে। নেক্রোফিলিয়া এক ধরনের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রাফাইল। নেক্রোফাইলে আক্রান্তরা মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যে দেশে নারীরা তাদের পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে গর্ব করেন, সেই দেশে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন করে নারী ধর্ষিত হন। এটি আমাদের সম্মিলিত বিবেকের ওপর আঘাত করছে। কিন্তু নারীদের কবরে তালা লাগানোর হৃদয়বিদারক দৃশ্য পুরো সমাজের মাথা লজ্জায় নত করার জন্য যথেষ্ট এবং তথাকথিত সম্মানের পাত্রের দিকে তাকানোর সাহস হয় না।
ডেইলি টাইমস বলছে, মৃতদেহের পবিত্রতা নিশ্চিতের মরিয়া চেষ্টা হিসাবে বাবা-মায়েরা তাদের মৃত কন্যাদের কবর লোহার খাঁচা দিয়ে ঘিরছেন। কিছু মানুষরূপী দানব তাদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য মেয়েদের মৃতদেহ বেছে নিচ্ছে।
২৮ এপ্রিল ‘কবরে অনিরাপদ’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি দৈনিক ডেইলি টাইমস
পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাজিদ ইউসুফ শাহ নামের এক পাকিস্তানি নাগরিক টুইটারে লিখেছেন, পাকিস্তানের তৈরি সামাজিক পরিবেশ একটি যৌনকামী এবং অবদমিত সমাজের জন্ম দিয়েছে। যেখানে কিছু মানুষ যৌন সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মেয়ের কবরে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন।
তিনি লিখেছেন, ধর্ষণ এবং এই ধরনের ঘটনার সংযোগের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির পোশাককে দায়ী করা হলে তা কেবল দুঃখ এবং হতাশা ভরা পথের দিকে নিয়ে যায়।
দেশটিতে মৃত নারীদের দেহ কবর থেকে তোলার পর যৌন সহিংসতার ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। এর আগে, ২০১১ সালে পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
ওই সময় দেশটির করাচির উত্তর নাজিমাবাদ এলাকার মুহাম্মদ রিজওয়ান নামে একজন কবর রক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ব্যক্তি কবর থেকে ৪৮ নারীর মরদেহ তুলে ধর্ষণ করেছেন বলে সেই সময় স্বীকার করেছিলেন।
পাকিস্তানের স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, দেশটির ৪০ শতাংশেরও বেশি নারী তাদের জীবনে অন্তত একবার কোনও না কোনও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
Array