• ২১ কোটি টাকার টেন্ডারে ৪ কোটি টাকার ঘুষ পিডির
• দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে নিশ্চুপ কৃষি মন্ত্রণালয়
• কাজ পাইয়ে দিতে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছে : ঠিকাদার
• জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে : টিআইবি
এক সরকারি আমলায় ‘কলুর বলদ’ অবস্থা দুই মন্ত্রণালয়ের। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও নিজ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। লুটপাটের মহাপরিকল্পনার ছক মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রমাণিত হলেও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে ওই আমলা বিভিন্ন প্যাকেজের টেন্ডার আহ্বান ও কেনাকাটা করে যাচ্ছেন। অজানা কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দায়ী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এমন ঘটনায় শুধু দায়ী ব্যক্তি নন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে— বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার লুটপাটের ছকের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘কলুর বলদ’ বানিয়েছেন। তার লুটপাটের ছক ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে! হঠাৎ এক উড়ো চিঠিতে জগৎ চাঁদ মালাকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তিনি ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’-এর প্রকল্প থেকে ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লুটপাটের মহাপরিকল্পনাকারী! এক প্রকল্প থেকেই তিনি প্রায় সাড়ে ৪২ কোটি লুটপাটের ধান্দা করেছিলেন! শেষমেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসে অভিযোগ উঠেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার লুটপাটের ছকের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘কলুর বলদ’ বানিয়েছেন। তার লুটপাটের ছক ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে! হঠাৎ এক উড়ো চিঠিতে জগদ চাঁদ মালাকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তিনি ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’-এর প্রকল্প থেকে ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লুটপাটের মহাপরিকল্পনাকারী! এক প্রকল্প থেকেই তিনি প্রায় সাড়ে ৪২ কোটি লুটপাটের ধান্দা করেছিলেন! শেষমেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্পটি ২০২১ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে কথা। এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি থেকে শুরু করে প্রকল্প অনুমোদন পর্যন্ত ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জগৎ চাঁদ মালাকার। ফলে প্রকল্পের প্রত্যেকটি খাতের ব্যয় তার হাতেই সন্নিবেশিত হয় ডিপিপিতে। এ সুযোগে প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের মহাপরিকল্পনা করেন তিনি।
তিনি প্রকল্পের ডিপিপিতে ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য ১১১ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছিলেন। জগৎ চাঁদ মালাকার বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাত্র ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে ১১১ কোটি টাকার সংস্থান চান ডিপিপিতে। পরিকল্পনা কমিশন সেই ডিপিপি অনুমোদন করার পর বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। মাত্র ৬৯ কোটি টাকায় ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলেও জগৎ চাঁদ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে ১১১ কোটি টাকায় পাস করিয়ে নেন। প্রকল্পটির যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অতিরিক্ত ৪২ কোটি টাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে লুটপাটের পরিকল্পনা ছিল তার।
কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার এখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ছয়টি রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করে ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৪ টাকা বিল করেছেন। কোটেশনগুলোর অধিকাংশ মালামাল গ্রহণ না করে ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন পিডি জগৎ চাঁদ লুটপাটের ধান্দায় প্রকল্পটি অনুমোদনের পরই ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে যন্ত্রপাতি ক্রয় করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ এনামুল হককে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের স্পেসিফিকেশন তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রকল্পটির অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগসহ স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে।
চার কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণে যা বলা হয়েছে
আমাদের কাছে আসা অভিযোগে জগৎ চাঁদ মালাকারের চার কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণ বলা হয়েছে- কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার এখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ছয়টি রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করে ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৪ টাকা বিল করেছেন। কোটেশনগুলোর অধিকাংশ মালামাল গ্রহণ না করে ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন পিডি জগৎ চাঁদ।
এছাড়া ১১টি ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে চার লাখ ১১ হাজার ২৩৬ টাকা উত্তোলন করে কোনো জিনিসপত্র ক্রয় না করে প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে ক্যাশ করে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। হিসাব নং- জগৎ চাঁদ মালাকার, অ্যাকাউন্ট নং- ৩৫৪৭১০১০১০৬৩৯৯৮৬ পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, খামারবাড়ি শাখা। ব্যাংকের হিসাব বিবরণী উত্তোলন করলে এর প্রমাণ মিলবে। নয়টি ইজিপিতে সরবরাহ ও সেবা টেন্ডার হয়েছে যার মধ্যে দুটি কনস্ট্রাকশন এবং সাতটি সরবরাহ। সরবরাহের মধ্যে ল্যাবরেটরি কেমিক্যাল কন্সুমাবলস-এ কার্যাদেশ ছিল ২২ লাখ ৫৬ হাজার ২৮০ টাকা। যা মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ প্রদান করে। এই কেমিক্যাল সামান্য পরিমাণ গ্রহণ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যা অডিট আপত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কনস্ট্রাকশনের দুটি কাজের প্রদেয় বিলের ১০ শতাংশ হারে প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালক গ্রহণ করেছেন।
এর বাইরে সাতটি সরবরাহ টেন্ডারের মোট পরিমাণ ছিল এক কোটি ৩৩ লাখ চার হাজার ৬৪৯ টাকা। এর মধ্যে ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক ইকুইপমেন্ট, ফার্নিচার,ফটোকপিয়ার, প্রজেক্টর ইত্যাদি। এর মধ্যে অনেক মালামাল গ্রহণ না করে ঠিকাদারের নিকট ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন পিডি।
প্রকল্পে কাজ পেতে আমার কাছ থেকেও ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে আমি টাকা দিয়েছি। পিডি সব অর্থনৈতিক লেনদেন মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিকের মাধ্যমেই করে থাকেন
এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মো. সোহেল
মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালকে দুই কোটি টাকার কাজ প্রদান করে এর মালিক ইকবালের নিকট থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া আইএসও সনদ অনুযায়ী বাছাই করার কথা থাকলেও ইহান এন্টারপ্রাইজের আইএসও সনদ এবং টেন্ডারের চাহিদা মতো অধিকাংশ কাগজপত্র না থাকার পরও ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ প্রদান করেন জগৎ চাঁদ। ইহান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যে উদ্ধৃত দরের ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসাবে ইহান এন্টারপ্রাইজ পাবে। যা মূল্যায়ন কমিটি এবং মহাপরিচালক চূড়ান্ত অনুমোদন করেছেন। অথচ প্রকল্প পরিচালক ইহান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ১২.৫০ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
গত বছরের ২৪ জুলাই টেন্ডার আইডি নং-৭১৪১৩০, যার মূল্য ছিল সাত কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ টেন্ডার মাল্টিবিজকে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গোপনীয় রেট মাল্টিবিজকে প্রদান করেন পিডি। এছাড়া এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। যা এসএমজির মালিক মো. সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর সত্যতা মিলবে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
পিডি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফার্নিচারের একটি টেন্ডার করেন। যার আইডি নং-৭৫০৫১৬। টেন্ডারে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা এমএআরএসকে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এ টেন্ডার পেতে মোট ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি হয়। যার মধ্যে ৩০ লাখ টাকা কার্যাদেশ প্রদানের সময় পিডি নেন এবং বাকি টাকা বিল পাওয়ার পর পরিশোধ করবেন বলে চুক্তি করা হয়।
চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের গত ৩০ নভেম্বর প্রকিউরমেন্ট অব জেনারেটর অ্যান্ড সেন্ট্রাল এয়ার-কন্ডিশন ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহের জন্য দরপত্র প্রকাশিত হয়। যার আইডি নং-৭৫৭৯৫৭। এ দরপত্রে মোট টাকার পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখানে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ৭০ লাখ টাকার ঘুষ প্রদানের চুক্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ক্লোটেক কর্পোরেশনকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। তাদের উদ্ধৃত দর ছিল পাঁচ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফজর | ৫:০৫ |
জোহর | ১১:৪৬ |
আসর | ৪:০৮ |
মাগরিব | ৫:১১ |
ইশা | ৬:২৬ |