টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে লাগামহীন লোডশেডিংয়ে জনজীবন চরমভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এতে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। শুধু ভূঞাপুর উপজেলাই নয় জেলার ১২টি উপজেলায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে বোরো ধানে পানি দিতে পারছে না কৃষকরা। ফলে ধানের জমি শুকিয়ে আছে। যেটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তাতে কয়েকটা জমিতে পানি দিতে পারলেও একটি পাম্পের আওতাধীন অনেকগুলো জমিতে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এছাড়া পোল্ট্রি খামারিরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
জানা গেছে, একদিকে প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে রোজাদাররা বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। রাতের তারাবির নামাজ, সেহেরিসহ অধিকাংশ সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না। ঘণ্টায় দুই-তিনবার লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল গ্রিড সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গাইল গ্রিডে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২১০ মেগাওয়াট। এতে পাওয়া যাচ্ছে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে এই গ্রিডে সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বরো ধানের আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১০ ভাগ জমির ধান পাকা অবস্থায় রয়েছে। কর্তনযোগ্য রয়েছে ২ ভাগ জমির ধান। এছাড়া দুধ অবস্থায় রয়েছে ১০ ভাগ ধান এবং ফুল অবস্থায় রয়েছে ৬০ ভাগ ধান। এতে বিদ্যুতের অভাবে জমিতে নিয়মিত পানি না দেওয়ায় আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
কষ্টাপাড়া গ্রামের জুলহাস মিয়া জানান, সারাদিনে দুই-তিন ঘণ্টার মত বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তাও আবার নিয়মিত না। বিদ্যুৎ আসে মিসকলের মত। প্রচণ্ড গরমে খোলা শরীরে থাকা খুবই কষ্টের। ঘরে ফ্যান থাকলেও সেটি ঘোরে না।
উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাথাইলকান্দি গ্রামের শহীদ জানান, যমুনা সেতুর লাইনে বিদ্যুৎ থাকেই না। যাও পাওয়া যায় তা সীমিত সময়ের জন্য। বর্তমানে মরার অবস্থা হয়েছে এই প্রচণ্ড গরমে। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই সরকার বলছে অথচ আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। তাহলে বিদ্যুৎ কই গেল।
একাধিক কৃষকরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ পাম্পের মালিকরা জমিতে পানি দিতে পারছে না। আর জমিতে পানি না দিতে পারলে ধানের আবাদও ভালো হবে না। অনেক দিন হল বিদ্যুতের এই অবস্থা। কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ পেলেও মেশিনের ইঞ্জিন চালুর হওয়ার পরই চলে যায়। কার কাছে বলবো কে সমাধান করবে। আবাদ না হলে মানুষ খাবে কী।
পোল্ট্রি খামারি আরিফ জানান, প্রায় প্রত্যেক খামারের মুরগি গরমের কারণে মারা গেছে। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। বিদ্যুৎ না থাকায় মুরগি রাতে ছটফট করে ফলে আমাদেরও জেগে থাকতে হয়। দিনের গরমও মারাত্মক। বিদ্যুৎ অফিসে বারবার বলেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, ভূঞাপুর স্টেশনের অধীনে বিদ্যুতের প্রয়োজন ১৮ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দিয়ে বিতরণ করতে হচ্ছে। এতে এক জায়গা বন্ধ রেখে অন্য বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবীর জানান, জমিতে পানি না থাকলে কাচা ধানগুলো প্রচণ্ড তাপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের অফিসের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে যাতে জমিতে সেচের বিঘ্ন না ঘটে এই বিষয়ে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামী ২৪ এপ্রিল বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে জমিতে আবাদ ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা নেই।
টাঙ্গাইল পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবায়দুল ইসলাম জানান, চাহিদার চেয়ে টাঙ্গাইল গ্রিডে বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় গ্রিডের থেকে যা পাচ্ছি সেটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে জেলা ও উপজেলায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এবং ঈদে মাকের্টগুলো ও অফিস আদালত বন্ধ হওয়ার পর বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী দুই এক দিন পরই আবহাওয়া অনুকূলে আসবে। ঈদে মাকের্ট ও অফিস আদালত বন্ধ হলে লোডশেডিং সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে।
Array