চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে বেইজিংয়ের জোরদার সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছেন।
টানা প্রায় ১৪ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। তবে চীন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করতে অস্বীকার করেছে এবং মস্কোকে উস্কে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে দায়ী করেছে।
যদিও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে না। মূলত এই বিষয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা মার্কিন মিত্ররা।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব হ্রাস করার জন্য রুশ পররাষ্ট্রনীতিকে চীনের সঙ্গে একই সুরে একত্রিত করেছেন পুতিন। সোমবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ বলে থাকে। তারপরও রোববারের বৈঠকের উদ্বোধনী মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়া-চীন সম্পর্কের উন্নয়নের প্রশংসা করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মস্কোতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর সম্পন্ন করার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু রোববার চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লি শাংফুর সাথে বৈঠক করেছেন।
পুতিন বলেন, ‘আমরা সামরিক বিভাগের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি, নিয়মিত আমাদের জন্য দরকারি তথ্য বিনিময় করছি, সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করছি, সুদূর পূর্ব অঞ্চল ও ইউরোপসহ এখানেও আমরা সমুদ্র, স্থলে এবং আকাশে যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করছি।’
অন্যদিকে বৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লি শাংফু বলেন, চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের নীতে অসংলগ্নতা নেই এবং উভয় দেশের সম্পর্ক খুব স্থিতিশীল। রাশিয়ান টিভিতে সম্প্রচারিত অনুবাদিত মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের উভয় দেশের মধ্যে খুব শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক খুব স্থিতিশীল এবং তা স্নায়ুযুদ্ধের যুগের সামরিক-রাজনৈতিক জোটকেও ছাড়িয়ে গেছে …।’
এমনকি রাশিয়া-চীন সম্পর্ক ‘ইতোমধ্যে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।
উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে এসেছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।
Array