আফ্রিকার দেশ সুদানে শনিবার (১৫ এপ্রিল) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দেশটির শক্তিশালী প্যারামিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)। আধা-সামরিক এ বাহিনী দাবি করেছে প্রেসিডেন্ট ভবন ও রাজধানী খারতুমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দখল করেছে তারা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, খারতুম বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য প্রান্তেও এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মরগান বলেছেন, ‘রাজধানী খারতুম এবং মারওই ছাড়াও দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে লড়াই হচ্ছে। দক্ষিণ দারফুরে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।’
এখন দুই পক্ষই চাইছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো দখল নেওয়ার জন্য। যারাই শেষ পর্যন্ত এ লড়াইয়ে জয়ী হবে তারা দেশের শাসনভারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।
সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় খারতুম বিমাবন্দরে হামলা চালাচ্ছে আরএসএফের সেনারা। অপর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি বিমানে আগুন জ্বলছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আরএসএফের ১ লাখ সেনা রয়েছে। শক্তিশালী এ বাহিনীর সদস্যরা আগে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ বাহিনী সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সুদানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দেশটির বর্তমান শাসক গোষ্ঠী ‘স্বাধীন কাউন্সিলের’ ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাধীন কাউন্সিল ও সুদানের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
জেনারেল মোহাম্মদ হামদান অভিযোগ করেছেন, জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছেন। আর এ অভ্যুত্থান ঠেকাতে কাজ করছেন তিনি। এছাড়া জেনারেল বুরহানকে মিথ্যাবাদী হিসেবেও অভিহিত করেছেন জেনারেল মোহাম্মদ হামদান।
দুই বাহিনীর প্রধানের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছে। দ্বন্দ্বটা মূলত প্যারামিলিটারি আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে। সুদানের সেনাবাহিনী চায় আগামী দুই বছরের মধ্যে আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করতে। কিন্তু আরএসএফ জানিয়েছে, একত্রীকরণ প্রক্রিয়া যেন আরও ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আরএসএফ মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। টিভিতে সরাসরি সংবাদ প্রচারের সময় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, টিভির এক সংবাদ উপস্থাপক রাজধানী খারতুমের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন। তাকে বলতে শোনা যায়, খারতুমের পরিস্থিতি শান্ত আছে। এমন সময়ই পেছন থেকে বিকট শব্দে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
এদিকে এ বিদ্রোহে এখন পর্যন্ত ৩ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দু’জন খারতুম বিমানবন্দরের একটি বিমানের ভেতর ছিলেন। ওই বিমানটির ওপর গোলা ছোড়া হয়।
সুদানের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই দুই বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে অসংখ্য সেনা আসেন। কিন্তু শুক্রবার তাদের মধ্যে মিটমাট হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এর একদিন পরই শনিবার হঠাৎ করে আরএসএফের সদস্যরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পের ওপর হামলা চালান। যদিও তারা দাবি করেছে, আগে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এরপরই তুমুল সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি
Array