মাদারীপুরের ডাসারে ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এ হামলার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ চারজনকে আটক করছে ডাসার থানা পুলিশ।
হামলায় আহত বিএনপি ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কালকিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলু ব্যাপারী (৬২), বিএনপির কর্মী তরিকুল ইসলাম (২৯), রাসেল মাতুবর (৩২), রাজ্জাক সরদার (৫০), বনি আমিন (২৫), বায়োজিদ সরদার (৩২), সারাফাত ব্যাপারী (২৬), ছাত্রদল নেতা শামীম মোল্লা (৩০), দুলাল বিশ্বাস (৩৭) ও মামুন শিকদার (৩৮)।
এছাড়া হামলায় ছাত্রলীগের তিনজন ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন- ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফ আশিক (২৬) ও অর্থ সম্পাদক কাজল আহমদ (২৫), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমতাজুল কবীর (২৮) ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মিল্টন ঢালী (৩৭)।
শনিবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার কাঁঠালতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার (৪৭), ডাসার যুবদল নেতা নুরু তালুকদার (৪৫), ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মন্নান সর্দার (৫৬) ও কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহিদুল ব্যাপারী (৪১)।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা আশিক ও কাজলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মাদারীপুরের ডাসারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদারের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচির এক বিরাট মিছিল বের করেন। পরে মিছিল নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থা করেন। এ সময় উপজেলার কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেন। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষ জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। পরবর্তীতে আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ডাসারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ বিষয়ে ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি যথাসময়ে শুরু করি। নেতাকর্মীরা সবাই আলোচনা শুরু করে। তখনই আওয়ামী লীগের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হন। পরে আমাদের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ চারজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। অথচ তাদের না ধরে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে, এটা কেমন নির্যাতন।
ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিএনপি অন্য জেলা থেকে লোক ভাড়া করে এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিল। আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের নিষেধ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এ হামলা চালায়। এতে আমাদের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মুমতাহিনা মৌরি বলেন, আহত অবস্থায় চারজনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ডাসার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানুজ্জামান বলেন, বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের নেতৃত্বে ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের দুজন কর্মীর ওপর হামলা করেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Array