মোঃ শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী থেকে: দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। নানা সংগ্রাম ও চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে সময়ের স্রোতে ১৫০ বছর পার করে ১৫১ বছরে পা দিয়েছে দেশসেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
দেশসেরা এ প্রতিষ্ঠানটি ১৮৭৩ সালের ১লা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজের ঝুলিতে অপ্রাপ্তির তুলনায় প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক বেশি।ভাষা আন্দোলন কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধই শুধু নয়, প্রতিটি জাতীয় ও ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের অবদান অপরিসীম। জাতির প্রয়োজনে প্রতিটি গণআন্দোলনে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মরণীয় ভূমিকা পালন নজির স্থাপন করেছে।
শুধু জ্ঞানার্জনই নয়, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুথান, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বাঙালীর সকল গৌরবোজ্জল ইতিহাসে আষ্টেপৃষ্টে ছড়িয়ে রয়েছে রাজশাহী কলেজের নাম।
৫২’র ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনারও রয়েছে এই ক্যাম্পাসেই। ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের উপর গুলি বর্ষণের খবর ট্রেনে করে রাজশাহী আসে।
তাৎক্ষনিক রাজশাহী কলেজ ও আশপাশের প্রগতিশীল চিন্তাধারার শিক্ষার্থীরা সমবেত হয় কলেজ ছাত্রাবাসে। সিদ্ধান্ত হয় ইট-মাটি দিয়ে রাতেই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরির। সে মোতাবেক তৈরি হয় শহীদ মিনার।
আজ এই কলেজের ১৫০ বছর পুর্তি ও ১৫১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দেশসেরা ও ঐতিহাসিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা,সংস্কৃতি, ও খেলাধুলা সহ মানবিক মুল্যবোধ গঠনে আলোকবর্তিকা হয়ে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকুক দেশ ছাড়িয়ে সমগ্র উপমহাদেশে।কথিত আছে, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পাঠদান করা হতো।
১৮৭৩ সালের পহেলা এপ্রিল রাজশাহী জেলা স্কুলে এফএ (ফার্স্ট আর্টস) শ্রেণী চালুর মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় প্রথম গ্রেডের মর্যাদা পায় কলেজটি।
ছাত্রসংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় একশতে, রাজশাহী কলেজ নামকরণ হয় সে সময়েই। একই বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির পর উত্তরবঙ্গের প্রথম কলেজ হিসেবে রাজশাহী কলেজেই চালু হয় বিএ কোর্স।
কলেজে ১৮৮১ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৮৮৩ সালে যোগ হয় বিএল কোর্স চালু হয়। স্নাতক কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি মিলে ১৮৭৭ সালের অক্টোবরে। ১৮৮৪ সালে নির্মাণ করা হয় কলেজের প্রথম ভবন (বর্তমান প্রশাসনিক ভবন)।
১৯০২ সালে পুঠিয়ার রাণী হেমন্তকুমারী তার নামে একটি হোস্টেল এবং কলেজের অধীনে মহারাণী হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করেন।প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত উত্তরবঙ্গ তথা দেশের শিক্ষাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলা প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে টানা চার বারের সেরা কলেজের স্বীকৃতিও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
Array