কুবি প্রতিনিধি,একা তালুকদার: মরা গাঙের জোয়ার এলে এর বাধকে যেমন আটকানো যায় না ঠিক তেমনি
একটি দেশ, জাতি, স্বত্বার প্রশ্নে মুক্তির চিন্তাকে যখন মৌলিক করে তুলে তখন স্বাধীনতা অর্জনকেও আটকানো যায় না।
যার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। আমাদের স্বাধীন চেতনা, স্বাধীন ভাবনার একটা সুন্দর ফসল আমাদের আজকের স্বাধীনতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,এই সার্বভৌম জাতিটির স্বাধীন চেতনার চৈতন্য উদয়ে প্রধান প্রাণশক্তিই ছিল তৎকালীন শিক্ষিত গোষ্ঠী তথা ছাত্র সংগঠন। যে ছাত্র বা শিক্ষার্থীর বিশাল অবদানে এই স্বাধীনতা অর্জন, সেই শিক্ষার্থীগোষ্ঠীর আজকের প্রতিনিধিরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসে স্বাধীনতা নিয়ে কি ভাবছে? স্বাধীনতার সৌন্দর্যই বা এই নতুন প্রজন্মের কাছে কিরুপ কিংবা নতুন বছরে তাঁদের অঙ্গিকারই কি এইসব প্রশ্নের উত্তর তুলে আনার চেষ্টা করেছেন একা তালুকদার।
রোধভা জাহান ফিজা,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
আমি স্বাধীনতা বলতে ব্যক্তিগতভাবে বুঝি অন্যের ক্ষতি না করে নিজের যা খুশি করা, বা করতে পারার অধিকার রাখা। আমার কাছে কথা বলা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেক ব্যাপক মনে হয়। আমি বিশ্বাস করি, আমি যা চিন্তা করি তা মুখে বলার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আমি রাখি এবং অবশ্যই তা যদি অন্যের ক্ষতির কারন না হয়ে থাকে। অথচ ডিজিটাল যুগে এসে আমরা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন আমাদের যেকোনো মতামত তুলে ধরতে যাই তার এপিঠ-ওপিঠ সমালোচনা। এই দিকটাতে লক্ষ্য করলেই দেখা যায় আমাদের পরমতসহিষ্ণুতার কতো অভাব। কারো সাথে মতের দ্বিমত হলেই আমরা তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতে শুরু করি। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে নিজের মতো করে বাঁচতে পারা। যেই জীবনে থাকবেনা সত্য বলার অপরাধে জেল জরিমানার ভয়। কিংবা নিজের মনের কথা বলার অপরাধে লাঞ্ছনার শিকার হবার ভয়। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের জীবন কাটবে নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে!
মারুফ শেখ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:
স্বাধীনতা মানে শুধু পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্তি নয়, স্বাধীনতা মানে চিন্তার মুক্তি, একটা সংকীর্ণ ভাবনা থেকে বের হয়ে পূর্ণ মনন বিকাশের মুক্তি। ১৯৭১-এর বীর সৈনিকেরা পাকিস্তানের শাসকদের কাছ থেকে যে স্বাধীনতা এনেছিলেন বা আনতে চেয়েছিলেন তা জাতির আত্মিক, মানসিক, অর্থনৈতি কিংবা রাজনৈতিক সব ধরনের মুক্তির কথা বিবেচনা করেই।অথচ আমি একজন শিক্ষার্থী ও দেশের নাগরিক হিসাবে বলতে পারি আজও আমরা পরাধীনতার শিকলে বন্দি।
যে স্বাধীনতা আমাকে দেবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শারীরিক, মানসিক মুক্তি।যেখানে থাকবে না আলাদা করে নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন। যেখানে থাকবে না অগণতান্ত্রিক চেতনা। স্বাধীনতা দিবসে আমার প্রত্যাশা রইল মানুষকে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়া হোক, মুক্তি দেওয়া হোক মানুষের চিন্তার। স্বাধীনতা দেওয়া হোক দু’বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মানুষদের। আর শিক্ষার্থী হিসাবে স্বাধীনতা দিবসে এই প্রত্যাশাই ব্যপ্ত করা হলো সকলের কাছে।
বহ্নিশিখা ঠাকুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
২০২৩ এ এসে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার আকাঙ্ক্ষা স্বাধীন বাংলাদেশে সুশিক্ষা প্রতিষ্ঠিত করা। কারন একটা জাতির মুক্তির অন্যতম উপায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া।একটি দেশে শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমেই পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন সম্ভব। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় সুষ্ঠু শিক্ষা নীতি প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। অন্তত দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শ মানের সিলেবাস প্রণয়ন করা উচিত। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী একই মানের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার পায়। একইভাবে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার অঙ্গিকার – আমি এই সুশিক্ষার সম্মান রক্ষা করব। আমার প্রতিটা কাজে সততার দৃষ্টান্ত রাখব।
অনির্বাণ চন্দ,মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
আজ ধর্মান্ধদের কবলে নিপতিত পাকিস্তানের দিকে তাকালে বুঝা যায়, স্বাধীনতা না পেলে আমাদের অবস্থাও হয়তো তাদের মতো হতো।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আজও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা, বেড়েছে ব্যক্তি স্বার্থচিন্তা, ধর্মীয় অরাজকতা, বেকারত্ব, দুনীর্তির কষাঘাতে লিপ্ত প্রতিটি শাখা, আইনের শাসন এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনো মত প্রকাশে কাজ করে পরাধীনতা যা প্রতিনিয়ত আঘাত করছে আমাদের গৌরবময় আদর্শকে।
একমাত্র স্ব স্ব অবস্থান থেকে নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ববোধই নিয়ে আসতে পারে আরেকটি স্বাধীনতা।