অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিশ্চিত করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে এ দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
প্রায় এক বছর ধরে দেন দরবার ও আলোচনার পর আইএমএফের ঋণ লাভে সফল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। যা দেশটির জন্য অতি প্রয়োজনীয় ছিল। ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩৩ মিলিয়ন ডলার দেবে আইএমএফ। বাকিটা দেওয়া হবে ধাপে ধাপে।
আইএমএফের কাছ থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঋণ পেলেও, বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ারি দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কাকে সামনে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।
করোনা মহামারির বড় প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। মহামারির শুরু থেকে ধীরে ধীরে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ২০২২ সালে অবস্থা চরম আকার ধারণ করে। ওই সময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
এরপর ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিলে ২০২২ সালে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভের জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে গত বছরের মে মাসে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয় কলম্বো। এরমাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয় দেশটির নাম।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর ট্যাক্সে বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। এই ট্যাক্স ছাড়ের ঘোষণায় শ্রীলঙ্কার সরকারের আয় বছরে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে ২০২২ সালে এসে।
এদিকে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে শ্রীলঙ্কার ঋণ কাঠামো নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দেয় চীন। এছাড়া ভারতও এগিয়ে আসে। এরপরই আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে সম্মত হয়।
অন্য সব দেশের মতো ঋণ দেওয়ার আগে আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকেও কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল- জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে, ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে, জ্বালানি ভর্তুকি বাদ দিতে হবে এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। শ্রীলঙ্কা এর সবই মেনে নেয়।
ট্যাক্স, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকদিন আগেও আবার বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, আইএমএফের শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনো উপায় ছিল না।
এদিকে ঋণ ছাড় করার পর আইএমএফের পরিচালক ক্রিস্টালিনা ইভানোভা বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় ট্যাক্স বৃদ্ধির যে ধারা চালু করা হয়েছে সেটি ধরে রাখতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাব্রি মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলো পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রীয় বিমানকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
সূত্র: বিবিসি
Array