ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য মহারাষ্ট্রের কৃষকরা পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে ২০০ কিলোমিটারের (১২৪-মাইল) পদযাত্রা শুরু করেছেন। পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় লোকসান ঠেকাতে দেশটির সরকার কৃষকদের কিছু আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে নারাজ কৃষকরা। শুধু তাই নয় তারা বলছেন, পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি দেশটির এক কৃষক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ পাঠানোর পর হতাশায় তার ফসল পুড়িয়ে দিয়েছেন। আরও অনেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন।
রাজ্যের নাসিক জেলার নামদেব ঠাকরের পারিবারিক খামারে সারি সারি পেঁয়াজ পড়ে আছে। ভারতের এই কৃষক বলেন, তিনি মাঠ থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে এবং বাজারজাত করতে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে অর্থ ব্যয় করতে চান না। কেননা পেঁয়াজ বিক্রি করে সেই খরচই তুলতে পারবেন না। তার মতো মহারাষ্ট্রের হাজার হাজার কৃষক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার কারণে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না বলেও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়েও কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের অভিযোগ আছে।
দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজ নিয়ে কৃষকদের এমন বিপর্যয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে জনবহুল উত্তরের রাজ্যগুলোর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থানের মতো রাজ্যে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষকরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্ত কুয়ালেকার বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনও উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, ভারতে সাধারণত দুই মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। বর্ষা ও শীতকালে সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম দিকে পেঁয়াজ তোলা হয়। আগাম উৎপাদিত পেঁয়াজের দ্রুত ব্যবস্থা করতে হয়। এরপর মার্চের মাঝামাঝি থেকে তোলা শীতকালীন ফসল দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
শ্রীকান্ত কুয়ালেকার আরও বলেন, গতবছর ভারতে জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রবল বৃষ্টি হয়। ফলে কৃষকরা দেরিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। মার্চ মাসে পেঁয়াজের ফলন এখন উদ্বৃত্তের দিকে যাচ্ছে। আগাম পেঁয়াজ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে তোলা হতো। ফলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মহারাষ্ট্রের নাসিকের কৃষকরা বলছেন, তারা পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের জন্য মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ রুপি পাচ্ছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় ১ কেজির দাম ২ থেকে ৪ রুপি মাত্র।
বছরে প্রায় ২৪ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ভারতে। চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ হলো ভারত। যেখানে মহারাষ্ট্রেই উৎপাদন হয় অর্ধেকের বেশি। দেশব্যাপী উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রপ্তানি করে দেশটি।
Array