যদিও ভোগান্তি কমানোর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলেও সেই ভোগান্তি রয়েই গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। এতে অর্থ এবং সময়ও অপচয় হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না।
তবে গুচ্ছ ভর্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার পরও ভর্তির জন্য দৌড়াতে হয় এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এ ছাড়া মেডিক্যাল, ডেন্টালসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের পৃথক পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি কমছে না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে সম্প্রতি সভায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দাবি তোলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতির নেতাদের ডাকা হয়।
এ বিষয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলোই গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করেছি। গত দুই বছরের পরীক্ষার আলোকে কীভাবে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা আয়োজন করা যায় তা নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশলগুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষিগুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে।
তবে অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
তবে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। এ গ্যাঁড়াকলে পড়ে এখনো গত বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি শেষ করতে পারেনি গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, “এই গুচ্ছ ভর্তিতে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আসতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতা বেশি, জনবল বেশি। এ ভর্তিতে তারা নেতৃত্ব দিলে সহজেই সফলতা আসবে। আর শৃঙ্খলা রাতারাতি আসে না। কৃষি গুচ্ছটা ভালো করছে। অন্যান্য গুচ্ছ শুরু হয়েছে, তাদের হয়তো আরও সময় লাগবে। বুঝতে হবে, আমরা তো এতে অভ্যস্ত ছিলাম না।
অন্যদিকে মেডিক্যাল ভর্তিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাদের তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আসলে যারা পরিচালনা করছেন, তাদের এ ব্যাপারে আরও স্টাডি করতে হবে। ভারতে একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে, প্রয়োজনে আমরা সেখান থেকেও শিখতে পারি।
তবে জানা যায়, আগে প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হতো। এতে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেত না, তারা সহজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে ভর্তি হতে পারত। কিন্তু কোভিডের কারণে প্রায় দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে।
অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে, তাই তারা গত বছর থেকে সবার আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করছে। এতে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী প্রথমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হয়ে থাকছে, পরে আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে চলে যাচ্ছে। ফলে আর্থিক ভোগান্তিতে পড়ছেন অভিভাবকরা।
Array