সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্যদের মতো সমান সুযোগ প্রদান করার পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে সমাজের ধারণা পরিবর্তন করা জরুরি। এজন্য সরকার ও ব্র্যাককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সম্প্রতি ব্র্যাক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থান বিষয়ে জাতীয় নীতি সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্র্যাক।
ব্র্যাক স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ,এডিডি (এডিডি) ইন্টারন্যাশনাল, সেন্টার ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) এবং লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের সহযোগিতায় ২০২০ সালে “প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং যুব কর্মসংস্থান” নামে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইউকে এইডসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত ইনক্লুসিভ ফিউচার কনসোর্টিয়াম – যা প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি আদর্শ প্রকল্প, তারই অংশ। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শোভন কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং মূল স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা আরও সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার জন্য পথ প্রশস্ত করা।
সম্প্রতি রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলে ব্র্যাক কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং সুপারিশকৃত নীতি পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনা করা হয়। আয়োজনটি সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, বহুপাক্ষিক/দ্বিপাক্ষিক অংশীদার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংগঠন (অপিডি) সদস্য, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ সংস্থার প্রতিনিধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, অনানুষ্ঠানিক বাজার নিয়োগকর্তা, মিডিয়া অংশীদার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করেছে।
ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কেএএম মোর্শেদ তার স্বাগত বক্তব্যর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাইটসেভার্স বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরিন আফরোজ। সবশেষে ব্র্যাকের পরিচালক (শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসন) সাফি রহমান সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
প্রকল্পটি দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সূচনালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত ১২৩৩ জন প্রতিবন্ধী যুবকের কাছে পৌঁছেছে। প্রশিক্ষিত স্নাতকদের মধ্যে, ৯৭% অনানুষ্ঠানিক বাজারে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ২৬১ জন যুবক সহায়ক ডিভাইস সহায়তা পেয়েছেন এবং গোল্ডেন সিটিজেনশিপ কার্ড পাওয়ার জন্য ৭০৩ জনকে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের সময়কালে, একটি স্টিগমা রিপোর্ট, একটি বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন টুলকিট ও একটি সংক্ষিপ্ত নীতিমালাসহ চারটি শিক্ষামূলক তথ্য তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, “অন্তর্ভুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য হল সকলকে সমান সুযোগ প্রদান করার পাশাপাশি সমাজের ধারণা পরিবর্তন করা। সমাজে সকলের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য কমিউনিটিতে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং ব্র্যাককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।“
ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কেএএম মোর্শেদ বলেন, “জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, অর্থাৎ বেশ বড় একটি অংশ প্রতিবন্ধী যারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, কারণ এরা খুব কম বা কোনও সাহায্যই পান না। এর আলোকে ব্র্যাক একটি জাতীয় নীতিমালা সংক্রান্ত সংলাপের আয়োজন করে যেখানে, প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয়।”
সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও বলেন, “ব্র্যাকের তৈরি স্টার মডেলটি একটি পরীক্ষিত এবং যথার্থ অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল। কিন্তু এর উন্নয়ন সাধনের জন্য দুটি লক্ষ্য অর্জন করা আবশ্যকঃ প্রত্যেকের সক্ষমতাকে চিহ্নিত করতে পারতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই স্থানীয় বাজার ও শিল্প বাজারকে প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।”
Array