আশিকুর রহমান হৃদয় ।। কিছুদিন আগেও নাজুক অবস্থা ছিলো হাসপাতালটির। ছিলো না পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদি। ভেতর ও বাইরের পরিবেশ ছিলো নোংরা-অপরিচ্ছন্ন। হাসপাতাল চত্বরে ঘুরতে দেখা যেতো গরু-ছাগল। ভেদরগঞ্জের মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাই ছিলো এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বলছি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র কথা। এখনকার চিত্র ভিন্ন। চিকিৎসক বা চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ঘাটতি নেই।
দীর্ঘদিনের সমস্যা কাটিয়ে এক আলোকিত নয়নাভিরাম স্বাস্থ কমপ্লেক্সে পরিনত হয়েছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতাল চত্বর নয় যেন ফুল বাগান। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতিদিনই আসে কয়েক শতাধীক স্থানীয় সাধারণ মানুষ। হাপাতাল সেবায় বেশ খুশিও তারা।
সাধারণ জনগন সরকারি হাসপাতাল নিয়ে যে বিস্তর অভিযোগ করে তার উল্টো ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালের বাইরে থেকে যতটা না পরিচ্ছন্ন মনে হয়। ভেতরে প্রবেশ দৃষ্টি এরানো দায়। করিডোরে হাটলে মনে হয় দেশের বড় কোন প্রাইভেট হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ। কমপ্লেক্সটির সার্বিক অবকাঠামোই সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মান ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে হাসাপাতালের সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ বেশ সন্তোষ্ট। হাসপাতালটির আমূল এই পরিবর্তন এর নেপথ্য যে মানুষটি কাজ করছেন,তিনি হলেন ওই হাসপাতালটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসান ইবনে আমিন। জানা যায় ২০২১ সালের ১২ আগষ্ট এখানে যোগদানের পর থেকেই নানাহ উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দৃশ্যপট পাল্টে গেছে এই হাসপাতালটির।
(১৫) ফেব্রুয়ারী সকালে হাসপাতালে গেলে প্রধান ফটক পেরুতেই চোখে পরে সাজানো সবুজ চত্বর। এখন সময় যেখানে আগাছা আর ময়লা আবর্জনায় ভরপুর ছিলো। এখনসেখানে ফল-ফুল ও উৎকট গন্ধের বদলে বাতাসে ভেসে আসে ফুলের সুবাস। ভবনে আউটডোরে টিকিট কাউন্টার। সামনে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের ভিড়। টিকিট বিক্রেতার দম ফেলার ফুরসত নেই। হেল্পডেস্কের সামনেও ভিড়। রোগীদের সুপেয় পানির সমস্যা নিরসনে বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে আধুনিক ও মানসম্মত পানির ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য শয্যা বিশিষ্ট ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, পালস অক্সিমিটার, কার্ডিয়াক মনিটর, নেবুলাইজার সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে এখানে।
অন্তর্বিভাগের ওয়ার্ডে প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি এখন। রোগীপ্রতি একজন দর্শনার্থী থাকতে পারেন। হাসপাতালে দালালদের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। নেই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের অবাধ উপস্থিতিও। গোটা হাসপাতাল এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। রয়েছে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র।
জানাযায়, ১৯৮২ সালে প্রতিষ্টিত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও এখন রোগীরা আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১৬ জন চিকিৎসক ও ২৪ জন সেবিকা(মিডওয়াইফ সহ) জরুরী ও বহির্বিভাগে নিয়মিত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। উপজেলায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রতিদিন কমবেশী প্রায় ৪০০জন এবং জরুরী বিভাগে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকে। এছাড়াও অতিসম্প্রতি সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হওয়ার পর প্রতিমাসে কমবেশী প্রায় ২০ থেকে ২২ টি সিজার অপারেশন করা হয় । নরমাল ডেলিভারী করা হয় প্রায় ৫০থেকে ৬০ জন গর্ভবতী মায়ের । তাছাড়াও জ্ঞাত যে জরুরী প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে ডেলিভারীর ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
হাসপাতালের রোগীর খাবার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সুবিধা-অসুবিধাসহ সার্বিক বিষয়ে নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়াও রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালের কর্মব্যস্থ সময় পার করতে দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, এটি সৌন্দর্যবর্ধিত হাসপাতাল। জানামতে এমন সরকারি হাসপাতালে কম আছে। উন্নত পরিবেশ পেলে রোগীদের অসুস্থতা কমে যায়। এই পরিবেশ ও সেবার কারণে রোগীর পরিমাণ বেড়েছে। আমরা ডাক্তাররাও অনেক ভালো সেবা দিতে চেষ্টা করছি। রোগীরাও নিয়ম মেনে হাসপাতালে সেবার জন্য আসছে। কিভাবে আরো সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।
কথা হয় উপজেলার ডি.এম.খালি ইউনিয়নের চর-পায়াতলি গ্রামের অপু মিয়ার সাথে। তার স্ত্রী হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন । তিনি বললেন, প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য হাসপাতাল থেকে পেয়েছি। চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়মিত আমার স্ত্রী সহ সকল রোগীর খোঁজখবর নিচ্ছেন। হাসপাতালের মেঝে ও দেয়ালে টাইলস লাগানো চকচকে পরিবেশ, শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন দেখে তিনি বললেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে হাসপাতালের দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ। এখানে ভালো মানের বেসরকারি হাসপাতালের মতোই সেবা পেয়ে প্রশংসা করলেন আরও অনেকে।
চিকিৎসা নিতে আসা রেহেনা বেগম বলেন, হাসপাতালটি এলে মনে হয় কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এসেছি। আগে হাসপাতালে ডাক্তার ঔষধ চিকিৎসা কোনটাই ছিল না। এখন সুশৃঙ্খলভাবে ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে। হাসপাতালে ঢুকলেই শরীরে একটা প্রশান্তি চলে আসে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা’রা জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার হাসান ইবনে আমিন স্যার যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে। আসলে চিকিৎসকদের একটু দরদি স্পর্শ, একটু সহানুভূতি, একটু হাসিমাখা মুখের কথায় জটিল ও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও আশাবাদী করে তুলে, রোগযন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডাঃ মোঃ হাসান ইবনে আমিন বলেন, মুজিব বর্ষের একটি স্লোগান ছিল স্বাস্থ্য খাতের ‘মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’ এই স্লোগানের মাধ্যমে আমরা একটি পরিকল্পনা করি কীভাবে এই হাসপাতালের পরিবর্তন আনা যায়। একটা সময় হাসপাতালে ভালো কোনো চেয়ার-টেবিল ছিল না। ডাক্তারদের রুমের অবস্থাও ছিল একদম সাদামাটা। রোগীদের বসার জন্য চেয়ায় ছিল না। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আলাদা কেবিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমার সঙ্গে একমত হন এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যথেষ্ট সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
Array