গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাজল মিয়াকে (৫০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তিনি সুলতান কাচ্চি ভাই নামের রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন। অভিযুক্ত জমির মালিকের নাম আজহার তালুকদার।

গুলিবিদ্ধ কাজল মিয়ার সহকর্মী আশরাফুল আলম বলেছেন, ‘কাজল ভাই সুলতান কাচ্চি ভাইয়ের সকল আউটলেটের ম্যানেজার। আমাদের আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সে একটি আউটলেট আছে। এই আউটলেটের জমির মালিক আজহার আলী। তিনি প্রায় সময়ই বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি-ধামকি দেন এবং দোকান ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন। আজও এসব বিষয় নিয়ে কাজল ভাইয়ের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর একপর্যায়ে তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। এতে কাজল ভাইয়ের পেটে ও দুই হাতে গুলি লাগে। আজহার তালুকদার বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে এতে অন্যান্য কর্মচারীরা আড়ালে গেলে তাদের গুলি লাগেনি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।’

এটি কী বৈধ অস্ত্র নাকি অবৈধ অস্ত্র সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে।’

জানা গেছে, ভাড়ার টাকা ও পানির বিল নিয়ে দ্বন্দ্বে জমির মালিক আজহার তালুকদার গুলি ছোড়েন।  রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর চাষাড়ার নবাব সলিমুল্লাহ রোডের আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্স ভবনের নিচ তলায় আজহার ও কাজলের মধ্যে কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হয়।

গুলির ছোড়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আজহার তালুকদার ও তার ভাই আজিজুল হক তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে। এসময় আজহারের ব্যবহৃত দু’টি বন্দুক ও গুলির খোসা (কার্তিজ) উদ্ধার করে পুলিশ।

আজহার তালুকদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাগে জান্নাত জামে মসজিদের সামনের চা দোকানী ইউনুস মিয়া বলেন, ঘটনার সময় আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভবন মালিক আজহার তালুকদার উচ্চশব্দে গালাগালি করছিলেন। এসময় হঠাৎ তিনি রাগান্বিত হয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি পিস্তল ও একটি বন্দুক (শর্টগান) নিয়ে পুনরায় রেস্টুরেন্টে আসেন। প্রথমে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এসময় ম্যানেজার কাজল এগিয়ে এসে তার পিস্তল ধরে ফেললে আজহার তালুকদার তার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়েন।

সুলতান ভাই রেস্টুরেন্টের আরেক ম্যানেজার রিপন সাহা জানান, মূলত দোকান ভাড়া নেয়া হয়েছে আজহার তালুকদারের ভাই আজিজুল হক তালুকদারের কাছ থেকে। কিন্তু আজহার তালুকদার বেশ কিছুদিন ধরে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করে আসছেন। রোববার রাতে এসে টাকা দাবি করলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি রাগান্বিত হয়ে স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে এক পর্যায়ে তিনি তার লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে প্রায় ৬-৭ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে কাজল মিয়া, মো বাবুল ও জনি গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও এই ঘটনায় আরো দুই পথচারী আহত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বলেছেন, এই ঘটনায় আজহার তালুকদার ও আজিজুল হক তালুকদার নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশপাশি আজহার তালুকদারের ব্যবহৃত পিস্তল ও বন্দুক দুইটি জব্দ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, কেন এই ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত পরে জানানো হবে।