ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২২ জানুয়ারি) রাত ১১টা থেকে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়াদ মিয়া সাগর। তিনি ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণ যোগাযোগ উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরও বেশ কয়েকজন মারধরের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা সবাই ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত ১১টার দিকে শিবির সন্দেহে শাহরিয়াদকে বিজয় একাত্তর হলের পদ্মা-৪০০৮ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে মারধর করতে থাকেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মারধরের একপর্যায়ে তাকে জেরা করা হয়। এসময় তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর সকালে তাকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সকালে আবারও বাঁশ ও কাঠ দিয়ে শাহরিয়াদকে মারধর করেন তারা।
এরপর সরেজমিনে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর হাত ও কানে মারধরের চিহ্ন দেখা যায়। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। এরপর সকাল ৮টার দিকে হলে এসে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির। পরে তিনি শাহরিয়াদকে প্রক্টোরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেন।
ভুক্তভোগী শাহরিয়াদ বলেন, এক জুনিয়রের সঙ্গে আমার ফোনে একটু কথা হয়েছিল। এটার সূত্র ধরে তারা আমাকে ৪০০৮ নাম্বার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সারারাত আমার ফোন চেক করে। একপর্যায়ে আমার কান ও হাতসহ দেহের বিভিন্ন অংশে কাঠ দিয়ে মারধর করে। তারা আমার বাবা-মাকে তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা আসলে তখন নির্যাতন বন্ধ করে।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর আবার নির্যাতন শুরু হয়। এরপর নির্যাতন চলে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আমাকে একটা মিনিটও ঘুমাতে দেয়নি। ফজরের নামাজও পড়তে দেয়নি। আমাকে সবচেয়ে বেশি মেরেছে সুজন, তুহিন আর মাজেদ। শুধু আমাকে নয়, মাহমুদ নামের এক জুনিয়রকেও বেধড়ক মারধর করে আমাদের সেশনের রাজু, শুভ ও প্রান্ত।
ঢাবি ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জেনেছি। প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তবে ছাত্রলীগ মারধরের রাজনীতি করে না। মারধরের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি। সে নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। সে বলেছে, আমি এটা বুঝতে পারিনি। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এসব বিষয় প্রক্টর দেখবেন।
ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় যে মারধরের বিষয়টা না হলে ভালো হতো। মারধরের ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে না হওয়াই ভালো। তবে ভুক্তভোগী যদি মারধরের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে মিটিংয়ে আছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী। পরবর্তীতে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
Array