বাংলাদেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে চলেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মেরিনা খাতুন। রাষ্ট্রীয় এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালকের অনুরোধ করা পত্রটি ‘যুদ্ধশিশু’ মেরিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি জামুকা থেকে মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো। এখন বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এর আগে তাড়াশের বীরঙ্গানা পচি বেওয়া (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) তার কন্যা মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ৮ তারিখে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৮২তম সভায় মন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেন। সেখানে ৯.১৩ নং আলোচ্য সূচিতে আলোচনা সভায় যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাড়াশের উত্তর পাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে (বর্তমানে মৃত) তার বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে। তারপর সেখানে তারা ওই নারীর ওপর পাশবিক, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। আর পাক-হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের। এর আগে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে ২০১৮ সালে পচি বেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে গেজেটভুক্ত হন।
দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মেরিনা খাতুন বলেন, আমাকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্বলিত একটি পত্র আমি হাতে পেয়েছি। এতে আমি দারুণ আনন্দিত। যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যুদ্ধশিশুদের আর্থিকভাবে সম্মানী প্রদানের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী মো. আরশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০১২ সাল থেকে চেষ্টা করছি। অবশেষে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বিষয়টি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এটা মন্ত্রণালয়ে পাস হবে।
Array