স্টাফ রিপোর্টার।।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় টাকা খেয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দিনগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। জানতে পেরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নেন পুলিশ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রামভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ও রামভদ্রপুর বাজারের মুদী ব্যবসায়ী সুনীল দত্তের ছেলে সঞ্জিত দত্ত (২৬) পাওনা টাকার উছিলা করে একই এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় স্থানীয়রা টের পেয়ে ধর্ষক সঞ্জিতকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেয়। পরিবারের লোকজন এ খবর পেয়ে প্রভাবশালীদের সহায়তায় ধর্ষক সঞ্জিতকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে ধর্ষকের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা খেয়ে ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা । ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ভেদরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক শাহীন সরদার, রামভদ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মৃধা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রাশেদ শেখ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফারুক সরদার, সাধারণ সম্পাদক শামীম সরদার, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নাসির সরদার প্রমুখ টাকা খেয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনা জানতে পেরে ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশ ভিকটিম ও তার বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান । তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
বুধবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুরে ভিকটিমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি ঘরে ভিকটিমের বাবা গুটিশুটি হয়ে বসে আছেন। তার মধ্যে ভয় ও আতংক বিরাজ করছে। ভিকটিম ঘরের এক কোনায় খুপরির মধ্যে লুকিয়ে আছে। দরিদ্র হওয়ায় ভিকটিমদের পরিবার ছোট একটি সরকারী ঘর পেয়েছেন। তাদের পুরনো ভাঙ্গাচোরা ঘরের পাশেই সরকারের দেওয়া ওই ঘরে থাকেন ভিকটিম। ওই ঘরের মধ্যেই ভিকটিমের ইজ্জত নষ্ট করে লম্পট সঞ্জিত। আমাদের দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকে ভিকটিমের বৃদ্ধ বাবা। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃদ্ধ কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। কিছু সময় পর বৃদ্ধ বলেন, আমরা গরীব অসহায় মানুষ। আমার সাত মেয়ে, কোন ছেলে সন্তান নাই। আমাদের দূর্বলতার সুযোগে একটি হিন্দু ছেলে আমার মেয়ের ইজ্জত মারছে। আমার পক্ষে কথা বলার কেউ নাই। শুনতেছি কিছু লোকজন এ নিয়ে বাণিজ্য করছে। কিছু লোকজন আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতেও পাছিনা, করতেও পারছিনা। আমাদের কেউ নেই। আমরা অসহায়।
অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন সরদার বলেন, ছাত্রলীগ নেতা নাসির সরদার ছেলের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছে। টাকা পয়সা লেনদেনের সাথে আমি জড়িত না।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাসির সরদার বলেন, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত না। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
বাকী অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয় জানতে সঞ্জিত দত্তের বাড়ি গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহালুল খান বাহার আজকালের বার্তাকে বলেন, আমরা ঘটনা জানতে পেরে ভিকটিম ও তার বাবাকে থানায় নিয়ে আসি। তারা কোন অভিযোগ দিতে রাজি হননি। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি। অভিযোগ সাপেক্ষে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
Array