জাপানি মা নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা জাপান ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে। সে বলছে, আমি জাপান ফিরে যেতে চাই। আমাকে বলা হয়েছিল, আমরা (বাবার সঙ্গে) আমেরিকায় যাবো। কিন্তু আমরা আমেরিকায় যেতে পারবো না। ২ বছর ধরে আমরা এখানে (বাংলাদেশ) আছি। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল, আমার মায়ের বিষয়েও আমাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। আমি নির্ভরযোগ্য রিসার্চ করেছি, এখন আমি সব জানতে পেরেছি। আমার স্কুল জাপানে, আমার সংস্কৃতি, বন্ধু-বান্ধবসহ সবকিছু জাপানে। আমি এখানে কীভাবে থাকবো? আমি সেখানে ফিরে যেতে চাই।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে শিশুটি এ আকুতি জানায়। এসময় তার মা ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
পরে শিশুটির মা এরিকো নাকানো বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পারিবারিক আদালতকে ৩ মাসের মধ্যে মামলাটি শেষ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ইমরান (শিশুদের বাবা) বিলম্ব করছে, এটি প্রায় এক বছর হয়ে গেছে এবং এখনও বিচার চলছে। এখন জাপানে থাকা আমার মা ও তৃতীয় মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করা জরুরি। এখানে আমার অবর্তমানে মেয়েদের দেখাশোনার জন্যও আমার পক্ষের কেউ নেই। এমতাবস্থায় তাদের সাথে নিয়ে আমার মুমূর্ষু মাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলাম।
শিশুদের বাবা ইমরান জাপানি এই মায়ের ব্যক্তিগত জীবন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কিছু গুপ্তচর বা গোয়েন্দা নিযুক্ত করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এমনকি আমরা কাছাকাছি শপিং মলেও যেতে পারি না। বিষয়টি আমি থানা ও পারিবারিক আদালতকে জানালেও তারা কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। ইমরান আমার ড্রাইভার, অনুবাদক, বন্ধু ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেছে। এমনকি সে আমার বাসার রিয়েল এস্টেট ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইমরান আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময় ও স্থানের বাইরেও মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ক্রমাগত আদালতের আদেশ অমান্য করেছে। এমনকি বেশ কয়েকবার আমাকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করেছে। ভিসা কর্তৃপক্ষও আমাকে সহযোগিতা করেনি। তারা মূলত আমার ভিসা প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে এবং অপ্রয়োজনে বিভিন্ন প্রমাণপত্র দেখতে চায়।
প্রসঙ্গত, দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করাতে রিট করেছিলেন জাপান থেকে আসা ডা. এরিকো নাকানো। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট শরীফ ইমরানের জিম্মায় থাকা দুই শিশু সন্তানকে একই বছরের ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত।
পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা পৃথক মামলা দায়ের করলে শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এরপর তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিল।
এরপর শরীফ ইমরানের জিম্মায় থেকে দুই শিশু সন্তানকে সিআইডি কর্তৃক উদ্ধারের পর ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
পরে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই শিশুকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে গুলশানস্থ বাসায় একসঙ্গে বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকার সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।
উক্ত সময়ের মধ্যে তাদের বিষয়টির সুরাহা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে এ বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় মামলাটি পুনরায় শুনানিতে ওঠে।
এদিকে জাপানে থাকা তার তৃতীয় ছোট কন্যা শিশুকে হাজির করানোর ও দেখা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আরেকটি রিট দায়ের করেন শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ।
Array