“দেশের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণির নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ের কমবেশি সংকট রয়েছে। কবে নাগাদ এ সংকট কাটবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সুখবর দিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যদিও রাজধানীর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে মিলছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই। আর সন্তান পিছিয়ে যাবে, এ দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরাও এসব বই লাইব্রেরি থেকে কিনছেন বেশি টাকা দিয়ে।
বিনামূল্যে বিতরণের এসব পাঠ্যবই বাজারে বিক্রির সত্যতা পেয়েছে এনসিটিবিও। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, খোলা বাজারে বই বিক্রি বন্ধে এনসিটিবির মনিটরিং টিম কাজ করছে।
অন্যদিকে অভিভাবকরা বলছেন, নতুন কারিকুলামের বই যথাসময়ে স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়নি। বছরের শুরুতে বই পাওয়া না গেলে সন্তানরা পড়াশোনায় পিছিয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এসব বই কিনছেন তারা।
সরেজমিনে রাজধানীর বাংলাবাজার, নীলক্ষেত, ভিকারুননিসা স্কুলের পাশে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত যেকোনো শ্রেণির বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পৃষ্ঠা, শ্রেণি এবং বিষয় ভেদে প্রতিটি বই ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বই ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় সেট আকারে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাংলাবাজারে একাধিক বই বিক্রেতার কাছে নতুন বছরের বই আছে কি না জানতে চাইলে তারা প্রথমে অস্বীকার করেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্রেতার গতিবিধি এবং উপস্থাপনা ভেদে গোপনে বই বিক্রি করছেন তারা। বাংলাবাজারের জননী লাইব্রেরিসহ বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকানে নতুন কারিকুলামের বই বিক্রি করতে দেখা গেছে। লাইব্রেরির পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও মিলছে এসব বই।
নতুন বছরের বই বিক্রি করতে দেখা গেলেও জননী লাইব্রেরির বই বিক্রেতা রাসেল আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে অন্যান্য বছর যেকোনো শ্রেণির বই পাওয়া যায় জানুয়ারির ২০ তারিখ থেকে। কিন্তু এ বছর স্কুল পর্যায়ে বই সংকট থাকায় আমাদের কাছে এখনো নতুন বছরের কোনো বই নেই। তবে গত বছরের বই আছে।
আরেক বিক্রেতা আউয়াল (ফুটপাতের দোকানদার) বলেন, এ বছর স্কুল পর্যায়ে বইয়ের সংকট থাকায় আমাদের কাছে নতুন বছরের বই নেই। আপনি (প্রতিবেদক) অন্যান্য দোকানে খুঁজে দেখতে পারেন, পেলেও পেতে পারেন।
রাজধানীর বাংলাবাজার, নীলক্ষেত, ভিকারুননিসা স্কুলের পাশে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত যেকোনো শ্রেণির বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পৃষ্ঠা, শ্রেণি এবং বিষয় ভেদে প্রতিটি বই ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বই ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় সেট আকারে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাবাজারে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির বই কিনতে এসেছেন এক ক্রেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, স্কুল থেকে সব বই পাওয়া যায়নি। তবে বাজারে খুব সহজেই যেকোনো ক্লাসের সব বই পাওয়া যায়। আমার কাছ থেকে সপ্তম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের একটি বিজ্ঞান বই ২৩০ টাকা রেখেছে। যা অন্য সময় ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, স্কুল থেকে বাচ্চাদের সব বই দেওয়া হয়নি। যথাসময়ে বই পাওয়া না গেলে পড়াশোনায় তারা পিছিয়ে যাবে, এ আশঙ্কা থেকেই বাজার থেকে বই কিনেছি। তবে বই কিনতে গেলে লাইব্রেরির লোকজন অনেক প্রশ্ন করে। প্রকৃত ক্রেতা যাচাই করার পরই তারা গোপনে বই বিক্রি করে।
নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা আক্তার বলেন, নতুন কারিকুলামের বইয়ের বেশ সংকট রয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ঘাটতি বেশি। সব বই হাতে পেতে আরও সময় লাগবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, খোলা বাজারে বই বিক্রি হচ্ছে এমন তথ্য আমরাও পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা ছদ্মবেশে আটজন ক্রেতা পাঠিয়েছিলাম। রাজধানীর নীলক্ষেত এবং ভিকারুননিসা স্কুলের আশপাশে এসব বই বিক্রি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি৷
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম
স্কুলে বই সংকট থাকার পরেও এসব বই কোন জায়গা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদার তুলনায় বেশি বই নিয়েছে। অতিরিক্ত বই স্কুল থেকেই আবার দোকানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষকরা বেশি বই নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন এমন উদাহরণও আছে। এছাড়াও আর অন্য কি কারণ রয়েছে সেটি জানতে আমরা কাজ করছি।
এ সমস্যার সমাধান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বই বিতরণ নিয়ে একটি অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রক্রিয়ায় আমরা কত বই ছাপিয়েছি, কোন স্কুলে কত বই প্রয়োজন, কতগুলো স্টক রয়েছে, আরও কত বই লাগতে পারে এমন নানা তথ্য হাতের মুঠোয় পাব। এ সংক্রান্ত একটি অ্যাপস দ্রুতই চালু করা হবে।
জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। এর মধ্যে মাধ্যমিকের রয়েছে ২৩ কোটি বই।
Array