রাজধানীতে বিএনপির ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল ঘিরে সতর্ক অবস্থায় থাকার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গণমিছিলের নামে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা ঠেকানোর প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন দল। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অরাজকতা ও সহিংসতা করলে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে তা প্রতিহত করতে সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের মতো তেমন উৎকণ্ঠিত কিছু না হলেও বিএনপির গণমিছিলের দিন আওয়ামী লীগ পুরো রাজধানীকে মানব পাহারায় ঢেকে রাখতে ব্যাপক শোডাউন করবে। শহরের প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাগ করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা অন্য রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো। বিএনপির কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে অংশ নেবেন ১২ দলীয় জোট ও ১১ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাকর্মীরাও। রাজধানীর মোট ৬টি স্পট থেকে দল ও জোটগুলো পৃথক গণমিছিল বের করবে।

বিএনপির কর্মসূচিতে সহিংস উপাদানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদারতায় বিএনপিকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বেশি লাফালাফি করলে আর ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপির যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে নেতাকর্মীদের অবস্থান নি‌য়ে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। বিএনপি গণমিছিলের নামে সারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অগ্নিসন্ত্রাস এবং ভাঙচুরের মতো সহিংস উপাদান যুক্ত করার ষড়যন্ত্র কর‌ছে।

বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভায় ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ করা হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ওরা (বিএনপি) তো ১০ তারিখেও সরকার পতনের ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু পারেনি। দেশের মানুষের সমর্থন তাদের সঙ্গে নেই। দেশের মানুষ জানে, শেখ হাসিনা যা বলেন, তাই করেন, করে দেখিয়েছেন। ওদের আন্দোলনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তবু আগে যেভাবে রাজপথে ছিলাম, এবারও থাকব।

তিনি বলেন, বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নমনীয় মনোভাবের কথা দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার বলেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে না
কাল ঢাকার ৬ পয়েন্টে নামছে বিরোধী জোট
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমরা রাজধানীতে খুব সতর্ক অবস্থায় থাকব। বিএনপির সঙ্গে দুষ্ট জামায়াত যুক্ত থাকায় তাদের নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই। সহিংসতা করার চেষ্টা হতেই পারে। বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে, তবে ভালো। নইলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মোড়ে ও মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সেদিন সকাল থেকে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাহারায় থাকবে। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগও এলাকায় পাহারায় থাকবে, সেই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান করবে সকাল থেকেই।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এলাকায় এলাকায় সতর্ক পাহারায় থাকবে প্রত্যেক নেতাকর্মী।

এ ছাড়া বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাজধানীতে কড়া পাহারায় থাকবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পাহারায় থাকবে। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিট নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সকাল থেকে বড় জমায়েত করবে। এ ছাড়া মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি কালবেলাকে বলেন, আমরা রাসেল স্কয়ারসহ রাজধানীতে তিনটি স্পটে সতর্ক অবস্থায় থাকব। এ ছাড়া রংপুরেও আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।

আওয়ামী লীগ ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেয় গত অক্টোবরে। কিন্তু বিএনপি গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ২৪ ডিসেম্বর একযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণমিছিল কর্মসূচি হাতে নেয়। সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ঢাকা ও রংপুর মহানগরের কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।