বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা। পদ্মা সেতু পর এবার চালু হচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বেলা ১১টা ১ মিনিটে উত্তরায় মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে উন্মোচিত হবে রাজধানীতে যোগাযোগব্যবস্থার নতুন অধ্যায়।
রাজধানীর উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে বুধবার উদ্বোধন হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
উত্তরা-মিরপুর এলাকার সর্পিল রেলপথ, সুদৃশ্য স্টেশন এবং ঝা ঝকঝকে রাস্তা তাক লাগিয়ে দিচ্ছে চোখে। প্রকল্প বাস্তবায়নকালিন দুর্বিষহ দিন পেছনে ফেলে উচ্ছ্বসিত মানুষ। ইতিহাসের অংশীদার হতে প্রতীক্ষায় সবাই।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বহুমুখী।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট-শাসন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার, বর্তমানে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম।
দেশের অবকাঠামো খাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, মেট্রোরেল এককভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা এখনও কেউ করেনি। অনেকেই বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ যোগ করবে।
‘তবে আমার বিবেচনায় মেট্রোরেলের বিষয়টি পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের চেয়ে আলাদা। মেট্রোরেল রাজধানীর দুই-আড়াই কোটি মানুষের সময় সাশ্রয় করবে। মানুষ দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে। বেশি বেশি কাজ করতে পারবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বেড়ে যাবে। মোট কথা অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে মেট্রোরেল।’
পদ্মা সেতুর মতোই মেট্রোরেল অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করছি। বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল এক অনন্য পাওয়া। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা এভাবেই এগিয়ে যাব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায় বলতে চাই- দাবায়ে রাখতে পারবা না।
মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাথমিক একটা হিসাবে দেখেছি, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে। শুধু পদ্মা সেতু চালুর কারণেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেল নিয়ে আলাদা কোনো প্রাক্কলন করা না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি মেগা প্রজেক্ট একসঙ্গে চালু হলে দেশে জিডিপিতে প্রায় ২ শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ হবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে যানজটে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিদিন যথাক্রমে ৩২ ও ১৭ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যানজটজনিত এক লাখ শ্রমঘণ্টার জন্য বছরে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মিলিয়ে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ঢাকা ও চট্টগ্রামে বছরে অন্তত ৪৯ হাজার কোটি টাকা যানজটে নষ্ট হচ্ছে। দুটি শহরের যানজটেই বছরে নষ্ট হচ্ছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, যা ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক বাজেটের পৌনে ৮ শতাংশ।
Array