শাখা না থাকলেও এখন সারা দেশের মানুষ ব্যাংকিংসেবা পাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় কমাতে বর্তমানে ব্যাংকগুলো শাখার পরিবর্তে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বিকল্প সেবার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এতে গ্রামীণ মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংসেবার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। আবার ঋণও পাচ্ছেন কেউ কেউ। এর মাধ্যমে ব্যাংকিংসেবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে। চাঙ্গা হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। এর ফলে শক্তিশালী হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই ২০১৪ সালে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। এজন্য বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছেন তারা। ফলে এ সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় এখন ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা, সেসঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। এজেন্ট ব্যাংকিং-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, অক্টোবর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ৫৬২টি হিসাবের মধ্যে গ্রামে রয়েছে ৮৬ দশমিক ২৪ শতাংশই, বাকিটা শহরের অধিবাসীদের। আর এসব হিসাবের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আলোচ্য সময়ে নারীদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৯২৫টি, যা মোট হিসাবের ৪৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা, যা গতবছরের একই সময়ে ছিল ২২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে আলোচ্য সময়ে এ সেবায় ঋণ বিতরণের পরিমাণ মাত্র ৬৭৪ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করলেও সেভাবে ঋণ বিতরণ করছে না। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে একদিকে কোনো খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে কোনো খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের অর্থে সিংহভাগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ করা গেলে তা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে আরও শক্তিশালী ও সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
একই বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী কালবেলাকে বলেন, আমাদের দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিংসেবার বাইরে রয়েছে। তাদের ব্যাংকিংসেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ৮ বছরে এ এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কেননা এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রথমবারের মতো গ্রামের আমানত প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এতদিন শুধু শহরেই আমানতে প্রবৃদ্ধি হতো। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অগ্রযাত্রার ফলেই এমনটা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে এজেন্ট ব্যাংকিং সামনের দিনে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংকের মোট এজেন্টের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৩৩টি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ৫৯১টি। একই সময়ে আউটলেট ১৮ হাজার ৩২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৩৬৪টি। এসব এজেন্টের ৮৫ শতাংশ ও আউটলেটের ৮৬ শতাংশই গ্রামে।
Array