চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহরের খাল, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে একসময় অনেক প্রজাতির দেশি পাখি ছিল। অনেক অতিথি পাখির আগমনও ঘটত। লোকালয়েও স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ ছিল বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির। কালের বিবর্তনে দেশি অনেক পাখিই এখন আর চোখে পড়ে না। পাখির আবাসস্থল ধ্বংস, পাখি নিধন ও খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় অনেক পাখি বিলুপ্ত হলেও এখনো বিরল প্রজাতির কিছু পাখি চোখে পড়ে এ এলাকার ঝোঁপ ঝাড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাটমোহরের হরিপুর ইউনিয়নের ডাকাতের ভিটাসংলগ্ন খাল, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, ইউনিয়নের নিচু জলাশয় ও ফসলের ক্ষেতসহ উপজেলার বিভিন্ন বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালের পাশের ঝোপঝাড় এবং মূলগ্রাম ইউনিয়নের চিরইল এলাকায় বেশি পাখি দেখা যায়।
অতীতে পাখি শিকারিরা পাখি ধরে বিক্রি করলেও সরকারের প্রচার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের সচেতনতায় পাখি শিকারের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের চরসেনগ্রামের বাসিন্দা জাহিদুজ্জামান জানান, ফসলের ক্ষেত, ফল ও ফুলবাগানসহ অন্যান্য স্থানে অসংখ্য ছোটবড় বিভিন্ন জাতের পোকা-মাকড় থাকে। পাখিরা ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে তাদের বংশ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এখন থেকে ২০-২৫ বছর আগেও চাটমোহরে সারস, কাক, শকুন, টিয়া, পেঁচা দেখা গেলেও বর্তমানে এ পাখিগুলো আর চোখে পড়ে না বললেই চলে।
বাংলাদেশ অপরূপ প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি এ.সি জীবন খাঁন জানান, চাটমোহরে লালকান চটক, দেশি সোনা বউ, বাংলা বাবুই, দেশী চাঁদী ঠোট, লালমুনিয়া, হলদে পা হরিয়ান, নীলকন্ঠ, জলময়ূর, লম্বা লেজ বিশিষ্ট শাহ বুলবুল, নীল গলা ফিদ্দা, ইন্ডিয়ান গোল্ডেন ওরিয়ন, ইষ্টি কুটুম, এশিয়ান কোয়েল, এশীয় বস্ত বউরী, করুন পাপিয়া, কালিম, চড়ুই, ডাহুক, তাইগা চুটকি, দাগী ছাতারসহ বিভিন্ন পরিচিত ও বিরল পাখি রয়েছে। বিলুপ্তির হাত থেকে পাখি রক্ষায় তিনি পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।
চাটমোহরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম চাটমোহরে কর্মরত থাকাকালে (২০২১-২২) শখের বশে ৭৮ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছিলেন।
পাখির প্রজাতির সংখ্যা যখন দিনকে দিন কমছে এমন সময়ে হরেক নাম ও রঙের পরিচিত এবং অপরিচিত পাখি শোভা বাড়াচ্ছে চাটমোহরের।
পাখির প্রতিকূল পরিবেশ সম্পর্কে মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ দাস জানান, মানুষ নির্বিচারে ফসলের ক্ষেতে, পুকুরে, জলাশয়ে, ফল গাছে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও বৃদ্ধি পেয়েছে। জমির আগাছা বাসাবাড়ির আঙিনায় বেড়ে ওঠা ঘাস নির্মূলেও মানুষ কীটনাশক ব্যবহার করছে।

তিনি আরও জানান, ঝোঁপঝাড়, খাল, বিল, জলাশয়, ফল বাগান, ফসলের মাঠে, গাছে পাখি বসবাস করে এবং এসব স্থান থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করে। পাখির খাবারের উৎসে কীটনাশক প্রয়োগ অব্যাহত থাকলে ক্রমাগত বৃক্ষনিধন হতে থাকলে পাখি বিলুপ্ত হতে থাকবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রচার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাখির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 
  
  
                            
                         
                                                
                                                 
                                                
                                                 
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                             
                                                
                                            
