বরিশাল ব্যুরো প্রতিনিধি/
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর অতিবাহিত হলেও মামলায় নেই কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি। বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী। আসামিদের জামিন হয়ে যাওয়ায় তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার পর দিন ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর অপমৃত্যু মামলা করেন ঝালকাঠি সদরের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন। ২৬ ডিসেম্বর জনস্বার্থে বরগুনা জেলার এম বালিয়াতলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখসহ ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২৭ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল ঝালকাঠি সদর থানায় ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা মনির হোসেন বাদী হয়ে লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখসহ ৮ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলাটি পরবর্তীতে ঢাকার নৌ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এই মামলার সূত্র ধরে লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখকে র্যাব ঢাকার কেরানীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে ২৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, মামলার আবেদনের পর আদালত তা এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন। এরপর মূলত আমাদের কাছে আর কোনো তথ্য নেই। থানা থেকে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা নেই। মামলার চার্জশিট দাখিল না হওয়ায় মামলাটি যেই অবস্থায় ছিল সেভাবেই আছে বলে জানি।
বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ বলেন, মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে না। আদালতের নির্দেশক্রমে সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কুমার বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার পুলিশি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এখনো ১৬ জনের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়ায় প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততার সঙ্গে প্রতিবেদন দাখিলের।
মামলার বাদী মনির হোসেন বলেন, অভিযান ১০ লঞ্চের আগুনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার বোন তাসলিমা, তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মিম, তানিসা এবং আমার ভাইয়ের ৭ বছরের ছেলে জুনায়েদ পুড়ে মারা গেছে। আজ পর্যন্ত তাদের মরদেহও পাইনি এমনকি কোন কবর তার সেই সন্ধানও পায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে কেউ নেই, কেউ থাকে না। বাস্তবে যারা পুড়ে মরেছে তাদের পাশে কেউ নেই। মামলা করেছি বিচারের আশায়। কিন্তু বিচার পাব বলে মনে হয় না। পুলিশ সিআইডি কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি আবার আমিও কার সঙ্গে যোগাযোগ করবো তা জানি না।
মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, লঞ্চ মালিকপক্ষ অনেক টাকার মালিক। এ কারণে মামলাটি ধীরে ধীরে ধামাচাপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নয়তো এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি হতাশার মধ্যে আছি, স্বজন হারালাম এরপরে মামলায়ও আমাকে হারানো হবে হয়তো।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযান ১০ লঞ্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বিশ্বাসীকে হতবাক করেছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে অন্তত নৌপথ নিরাপদ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা কেউ করেনি। এখনো নিরাপদ হয়নি নৌরুট।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিচার প্রার্থীরা হতাশ হতেই পারেন মামলার গতি দেখে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিরসন করা, প্রভাব কমিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টায় ঝলকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪৯ জন নিহত হন। তবে নিখোঁজদের স্বজনরা বলছেন, আরও বেশি মানুষ পুড়ে মারা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও দুই শতাধিক। ধারণা করা হচ্ছে ৪ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে আসছিল লঞ্চটি।
Array