আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিতে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠে অবস্থান করছেন। সম্মেলনে প্রবেশ করতে টিএসসির উদ্যান গেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিশাল লাইন দেখা যাচ্ছে। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের চারটি গেট খুলে দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা থেকে আসা কাউন্সিলর মমতাজ উদ্দিন ঢাকা পোস্ট বলেন, গতকাল রাতে রওনা দিয়েছি। ভোরে এসে ঢাকায় পৌঁছেছি। বিশাল লাইন দেখে তো মনে হচ্ছে না সঠিক সময়ে সোহরাওয়ার্দীতে প্রবেশ করতে পারব। দেখি কখন ডুকতে পারি।
এবার সারা দেশ থেকে দলটির সাংগঠনিক জেলা-মহানগর শাখার সাড়ে ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ২৫ হাজার ডেলিগেট অংশ নেওয়ার কথা।
জানা গেছে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরাসহ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতা ঢাকায় এসেছেন। বিভিন্ন নেতার বাসা, আবাসিক হোটেল এবং আত্মীয় ও পরিচিত জনের বাসায় উঠেছেন। এসব নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সম্মেলনে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উপস্থিতির সংখ্যাও।
কুমিল্লা জেলা থেকে আসা আব্দুস সাত্তার বলেন, সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসেছি। শনিবার সকাল ৭টায় টিএসসির দিকের গেট দিয়ে সম্মেলন স্থলে প্রবেশের জন্য এসেছি। আমার মতো বিভিন্ন জেলার কাউন্সিলরা এসেছেন।
সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট রয়েছে। এরমধ্যে শিখা চিরন্তনের দিকে গেট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ভিআইপি অতিথিরা প্রবেশ করবেন। বাকি ৪টি গেট দিয়ে কাউন্সিলরদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আসা ডেলিগেট আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। রাতে ভগ্নিপতির বাসায় অবস্থান করে শনিবার সকালে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে এসেছি।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের মাঝে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ কার্ড বিতরণ করা হয়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কী বার্তা দেন নেত্রী, সেটা শোনা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন তারা। সম্মেলন শেষে আবার নিজ জেলায় ফিরে যাবেন।
সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকসহ সবমিলিয়ে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। তবে এবার বিদেশের কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ৫০ হাজার লোকের খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। ৩০-৩৫ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই শতাধিক শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য- ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রত্যয়’। সম্মেলনের মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফিট, প্রস্থ ৪৪ ফিট। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হয়েছে সম্মেলনের মঞ্চ। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র রয়েছে।
সম্মেলনের মঞ্চের পেছনের দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে সবার উপরে। তারপরেই সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি শোভা পাচ্ছে। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক এবং মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ ও জাতীয় চার নেতার ছবি রয়েছে।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসন নেবেন। এরপর আধাঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। পরে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সবশেষ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এ লক্ষ্যে দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ প্রায় শেষ করেছেন।
Array