দ্রব্যমুল্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।বর্তমানে সময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সপ্তাহের কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়ছে। এবার বাজারে দাম বেড়েছে চিনি, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের। অন্যদিকে শীতকাল আসলেও দাম কমেনি সবজির। এছাড়া ডিম ও মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নমানের আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে মিরপুর ১১ নম্বরের বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সপ্তাহের বাজারে দাম বেড়ে এক কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ১০৮ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজিতে।
আজ এক কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। প্যাকেট আটার দাম ৭০-৭৫ টাকা। এছাড়া দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। আগে দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হতো ১২০-১২৫ টাকায়। দাম বেড়েছে দেশি মসুরের ডালের। প্রতিকেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১১০-১২০ টাকা। এছাড়া, ১২০-১২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান মসুরের ডাল।
বাজারে বেড়েছে ভোজ্যতেলর দাম। আগে এক লিটার তেলের বোতল ছিল ১৭৮ টাকা হলেও, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। ৮৮০ টাকা পাঁচ লিটারের বোতলের দাম এখন ৯২৫ টাকায়। তেল, আটা, চিনি ও ডাল বিক্রেতা নাদিম বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে। যার প্রভাবে পড়েছে বাজারে। গত সপ্তাহেই বলেছিলাম চিনির দাম বাড়তে পারে। ঠিক তেমনটাই হয়েছে। আটার দাম অনেক বেড়েছে। ২ কেজির আটার প্যাকেটে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।
এদিকে বাজারে কমেছে ডিমের দাম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। আগের দাম ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাঁসের ডিম। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২২০-২২৫ টাকা।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের ডিম বিক্রেতা আশিক বলেন, ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমেছে। বাজারে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিমের হালি ৪০ টাকা। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে হাঁসের ডিম।
এদিকে শীতকাল আসলেও বাজারে কমেনি সবজির দাম। প্রতিকেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। আকারভেদে পাতাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। প্রতিকেজি শসার দাম ৭০-৮০ টাকা। এছাড়া, লম্বা বেগুন ৬০-৭০ টাকা, গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা, টমেটো ১২০-১৩০ টাকা, শিম ৮০-৯০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা,
চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের বাজারে প্রতি পিস চাল কুমড়া ৫০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০-৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা ও লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা।
বাজারে কথা হয় সবজি বিক্রেতা আলামিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত শীতকালে সবজির দাম কম থাকে। তবে এখনও দাম বেশি। কারণ আমদানি ও সরবরাহ কম। আশা করছি, দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই সবজির দাম কমে যাবে।
বাজারে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩০-৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। এছাড়া, রসুন ১৩০-১৪০ টাকা ও আদা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৬৮০-৭০০ টাকা। ৮৫০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি খাসির মাংস। বাজারে কমেছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। এছাড়া, সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, খামারি আর পাইকারদের অজুহাতের শেষ নেই। তাদের ইচ্ছা হলেই দাম বাড়িয়ে দেয়। সপ্তাহের ছুটির দিনে এমনিতেই মুরগির দাম একটু বেশি থাকে।
মুরগির বাজারে কথা হয় পোশাক ব্যবসায়ী মাহাতাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই বাজারে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চলা যাচ্ছে না। এমনটা চলতে থাকলে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো অসংখ্য মধ্যম আয়ের মানুষ বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা যে কীভাবে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন- তারাই ভালো জানেন।
Array