- গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি/
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা বৃদ্ধ মোঃ আবুল কালাম মল্লিকের (৭০) বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। নাগেরপাড়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউনুচ সরদারের দায়ের করা মামলায় দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহঃবার দুপুরে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালত-২ এর বিচারক মরিয়ম আক্তার নীপা এ রায় দেন। এর আগে সাজানো স্বাক্ষীদের দিয়ে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিয়েও মামলায় টিকতে পারবেনা জেনে মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ স্থানীয় মাস্তানদের দিয়ে বিবাদীদেরকে হুমকি ধমকি দেন। এমনকি ইউনুচ মামলা তুলে নেয়ার বিনিময়ে শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন বলেও অভিযোগ করেন মামলার বিবাদীরা।
মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ সরদার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া গ্রামের মৃত তাহের আলী সরদারের বড় পুত্র। মামলার বিবাদীরা হলেন একই এলাকার আলী আকবর মল্লিকের বড় ছেলে আবুল কালাম মল্লিক, আনছার চৌধুরীর বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিনটিয়া এলাকার ইয়াসিন মীরের ছেলে মাওলানা বিল্লাল হোসেন।
মামলার নথি, বিবাদী ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের (পিটিআই) সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ আবুল কালাম মল্লিকের নিজের এবং তার মায়ের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নাগেরপাড়া ইসলামীয়া কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত তহবিল, জনগণের নিকট থেকে তোলা টাকা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের টাকা দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উক্ত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যয়ভার চালিয়ে আসছিলেন মাদ্রাসা ও এতিমখানার কমিটির সদস্যরা। মাদ্রাসটির প্রতিষ্ঠাতা সরকারের ১ম শ্রেনীর কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক ২০১১ সালে সরকারী চাকরী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর থেকে এলাকাবাসীর অনুরোধে বিভিন্ন মেয়াদে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০১৮ সালে স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী মাদ্রাসা ও এতিমখানার বিভিন্ন খাতে আয়কৃত টাকার ভাগ চায়। কিন্তু মাদ্রাসা ও এতিমখানার টাকা অবৈধভাবে তাদেরকে দিতে অস্বীকার করেন প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আবুল কালাম মল্লিক। এটা নিয়ে বিরোধ তৈরী হলে পরবর্তীতে আবুল কালাম মল্লিকের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ভূয়া একটি কমিটি গঠন করে দুস্কৃতিকারীরা। এবং পরবর্তীতে তারা যোগসাজস করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ সরদারকে দিয়ে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং সি আর ১৬৯/২১(গোসাইরহাট)। মামলায় পুলিশি প্রতিবেদন, দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহঃবার দুপুরে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালত-২ এর বিচারক মরিয়ম আক্তার নীপা মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় খারিজ করে দেন এবং বিবাদীরা নির্দোষ প্রমানীত হওয়ায় তাদেরকে খালাস প্রদান করেন।
মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও চাঁদা দাবীর জন্য ইউনুচ ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আদালত আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করেছেন। সম্মান দেয়ার এবং নেয়ার মালিক আল্লাহ। আমাদের আইনজীবীর সাথে কথা বলে মানহানি মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও চাঁদা দাবীর বিষয়ে জানতে মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ সরদারকে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দিলে মোবাইলে কল কেটে দেন।
বিবাদীদের আইনজীবী এডভোকেট মোঃ জহিরুল ইসলাম (সবুজ) বলেন, ‘মামলার বাদী ইউনুচ সরদার এবং স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য প্রদান ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমানীত হওয়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালত-২ এর বিচারক মরিয়ম আক্তার নীপা মামলাটি খারিজ করে দেন এবং বিবাদীরা নির্দোষ প্রমানীত হওয়ায় তাদেরকে খালাস প্রদান করেন।
Array