- ভোলা (বরিশাল) প্রতিনিধি/
শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা তাহজীব তামাদ্দুন ধ্বংসের চক্রান্ত, মাদ্রাসা পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তি, মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যেও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করে ইসলামি ও মাদ্ররাসা শিক্ষার স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ এবং মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ভোলা জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোলা জেলার ৭টি উপজেলার সকল মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী এবং ভোলা সদর উপজেলার সকল মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থীগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। বেলা ১১টায় মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষিত হলেও সকাল থেকেই পুরো শহর মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ভোলা জেলা সদরের কে-জাহান শপিংমলের সামনে জমিয়াতুল মোদাচ্ছেরিনের ব্যানারে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, মিছিলটি জেলা সদরের বাংলা স্কুল মোড়সহ জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভোলার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান জমিয়াতুল মোদারচ্ছেরিনের ভোলা জেলার নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছিন ভোলা জেলা সভাপতি ও করিমজান মহিলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুল খালেক। মাওলানা মো. শামছুল আলম চৌধুরীর ও মাওলানা মো. আমিনুল হক নোমানীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও ভোলা জেলা সাধারণ সম্পাদক এবং ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম।
আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন ভোলা জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা সভাপতি এবং বোরহানউদ্দিন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আহাম্মদ উল্লাহ আনছারী। জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সহসভাপতি ও লালমোহন উপজেলা সভাপতি এবং লালমোহন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মো. মোশারেফ হোসেন, জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরফ্যাশন উপজেলা সভাপতি এবং হাজারীগন্জ হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মঈনউদ্দীন, জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সহসভাপতি ও দৌলতখান উপজেলা সভাপতি এবং দিদারুল্লাহ ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুছ ছামাদ, আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন সম্পাদক, দৈনিক আজকের ভোলা, বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ডের ভোলা জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজী, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ভোলা জেলা সভাপতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। ভোলা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি ও পরানগন্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আলহাজ্ব মাওলানা মীর মো. বেলায়েত হোসেন। তানজিমুল কোরআন মাদরাসা ভোলার পরিচালক মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারিক, ভোলা জেলা মুসলিম ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহমান খান তালুকদার, আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহিম জসিম সম্পাদক বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন দৌলতখান উপজেলা, জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সহ সাধারণ সম্পাদক ও মনপুরা উপজেলা সভাপতি এবং মনপুরা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. অজিউল্লাহ ফরহাদ, ভোলা সদর উপজেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আবদুল লতিফ। মো. কামরুজ্জামান সম্পাদক বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন চরফ্যাশন উপজেলা ও সহকারী অধ্যাপক কুচিয়া মোড়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা। ভোলা জেলা ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. নুরে আলম, মো. নিজাম উদ্দিন হুমায়ুন শরমান অধ্যক্ষ চরমাদ্রাজ ফাজিল মাদরাসা চরফ্যাশন, মাওলানা মো. ইদ্রীস যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহানউদ্দিন উপজেলা ও সুপার শিবপুর দারুল আমান দাখিল মাদরাসা বোরহানউদ্দিন, জেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের প্রচার সম্পাদক ও রমাগন্জ তোফায়েলিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. হোসেন, ভোলা সদর উপজেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সেক্রেটারি ও দক্ষিণ কোড়ালিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. হারুন, মো. সাঈদুল হাসান সেলিম সভাপতি, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম, তজুমুদ্দীন উপজেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সভাপতি ও পূর্ব গোলকপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আইয়ুব আলী, লালমোহন উপজেলা জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সম্পাদক ও চতলা হাসেমিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুজাফর মো. মাঈনুদ্দীন, পাঙ্গাশিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আমির হোসেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগী নয়। মাদরাসায় এসকল বই পাঠ্যপুস্কক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রশ্নই আসেনা।
এধরনের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।
স্মারকলিপিতে তারা দাবি করেন–
১ .মাদরাসা শিক্ষার জন্য এ সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যবই, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদাররেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করার বিকল্প নেই। অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে।
২. দাবিকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।
৩.সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি পরীক্ষা দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে।
৪.বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকুরী জাতীয়করণ করতে হবে।
৫. সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৮ সালে প্রণিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা মঞ্জুরীর ১৪ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
৭. নারী কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. আরবি প্রভাষকগণের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯.অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
১০. কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১.মাদরাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে।
১২. মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সংশোধিত) স্কুল ও কলেজের নীতিমালা ২০২১ এর সাথে সমন্বয় করে মাদরাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে হবে।
১৩. প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে যা অমানবিক। অনতি বিলম্বে বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
Array