লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি/
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে খানকা শরিফের পীরখ্যাত আনিছুর রহমান নসু বিভিন্ন কৌশলে ২৩ পরিবারের প্রায় ১৩ একর জমি নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নিয়েছেন। সম্প্রতি স্বাক্ষর ও ছবি জালিয়াতি করে সৌদিপ্রবাসী আকবর আলীসহ চারজনের ১৮ শতাংশ জমি নসু নিজের নামে লিখে নেন। উপজেলার বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেনের সহযোগিতায় তিনি মানুষের জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কলাকোপা গ্রামে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন নসু, তার ভাই আতাউর রহমান খোকন ও ওহিদুর রহমান চুন্নুর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি একটি ডাকাতি মামলায় তারা পলাতক।
অভিযুক্ত নসু একই এলাকার আবদুল কাইয়ুমের ছেলে ও হাফেজ আবদুল কাদের ছায়েবের খানকা শরিফের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভুক্তভোগী তছলিম ভূঁইয়া বলেন, আমার ১২০ শতাংশ জমি নসু নিজের নামে খতিয়ানভুক্ত করে নিয়েছেন। এর পর থেকে আমার জমি নসু ও তার ভাইয়েরা ভোগ করছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।
এ ছাড়া মনির আহম্মদ, শাহ আলম, মো. হারুন ও ইব্রাহিম ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নসুর পূর্বপুরুষ প্রায় ৯০ বছর আগে খানকার প্রচারে কলাকোপা আসে। সেখানে তারা প্রথমে গৃহশিক্ষক হিসেবে ছিল। এলাকার মানুষ শিক্ষিত না হওয়ায় নসুর পূর্বপুরুষরা স্থানীয়দের জমি নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নেয়। সেই থেকে তারা এখানকার বাসিন্দা। পূর্বসূরিদের মতো নসু ও তার দুই ভাই মানুষের অজান্তে প্রায় ১৩ একর জমি নিজেদের নামে লিখে নেন। স্থানীয়দের অনেককেই তারা ভিটেমাটি ছাড়া করেছেন। যাদের মধ্যে কয়েকজন বেড়িবাঁধ এলাকায় বাস করছেন।
মালয়েশিয়াপ্রবাসী নুর হোসেন পরান বলেন, ‘৬ সেপ্টেম্বর ভোররাতে নসু ভাড়াটে লোকজন দিয়ে আমাদের ঘরে হামলা চালায়। তখন আমরা একজনকে আটক করি। এতে আটক ব্যক্তি ছাড়াতে ফের ১৫-২০ জন হামলাকারী দিয়ে আমাদের ঘর ভাঙচুর করে। এ সময় আমাদের দুটি পাসপোর্ট ও নগদ টাকাসহ ৫ লাখ টাকা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় নসুর লোকজন। ওই ঘটনায় আমরা রায়পুর থানায় মামলা করেছি। এর পর থেকে নসু ও তার ভাইয়েরা পলাতক। নসু ৪০ বছর ধরে আমাদের ১৮ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছে।’
আকবর আলীর স্ত্রী সাহেদা আক্তার বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আমার স্বামী সৌদিতে রয়েছে, কিন্তু শুনেছি তার নামের জমি নসু নকল ছবি ও স্বাক্ষর দিয়ে লিখে নিয়েছে।’
আনিছুর রহমান নসু বলেন, ‘আমার জমি আমি ভোগ করছি। মানুষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। কারও অভিযোগ থাকলে আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ রইল। কোনো নকল স্বাক্ষর দিয়ে কারও জমি লিখে নেওয়া হয়নি।’
বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই নসুকে সহযোগিতা করছি না। নসু কারও জমি দখল করেনি। জমিগুলো নসুদেরই। এলাকার মানুষ নুসর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাকে এলাকাছাড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
Array