নিজস্ব প্রতিবেদক//
গাজীপুরে গাড়ির ভেতর মরদেহ পাওয়া শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ বিষাক্ত গ্যাস বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তাদের সেই গাড়ির ভেতরে একটি বিড়াল ঢোকানোর ২৬ মিনিটের মাথায় প্রাণীটির মৃত্যু হয়। গাড়িতে বিড়াল ঢুকিয়ে পরীক্ষাটি করেছে থানা পুলিশ।
তাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলা তদন্ত করছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাদির উজ্জামান। তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৭ আগস্ট গাজীপুরের কামাড়জুরী এলাকার বাসিন্দা টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার (৩৫) নিখোঁজ হন। পরদিন ভোরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের খাইলকুর এলাকায় গাড়ির ভেতর থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ভিসেরা, ময়নাতদন্ত কোনোটিরই রিপোর্ট আসেনি
এদিকে, এই দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর আড়াই মাসেরও বেশি পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা শেষ হয়নি।
তবে গাড়িতে ঢোকানো বিড়ালের মৃত্যুর পর পুলিশ ধারণা করছে, ওই দম্পতির মৃত্যু বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই হয়েছে।
জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের কর্মস্থলের অবস্থান পাশাপাশি। তাদের বাড়ি গাজীপুর মহানগরের কামারজুরী এলাকায়। ঘটনার দিন (১৭ আগস্ট) সকালে তারা ওই গাড়িতে কর্মস্থলে যান। সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে তারা নিখোঁজ হন। ১৮ আগস্ট লাশ উদ্ধারের পরদিন জিয়াউরের বড় ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গাছা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের দাবি প্রত্যাখ্যান বাদীপক্ষের
বাদী আতিকুর রহমান বলেন, “পুলিশের এই বিড়াল ব্যাখ্যার কোনো ভিত্তি নেই। আমরা তাদের যুক্তি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। সঠিকভাবে তদন্ত করতে না পেরে তারা এমন ব্যাখ্যা দিচ্ছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাছা থানার এসআই নাদির উজ্জামান জানান, শিক্ষক দম্পতি যে প্রাইভেট কারটি ব্যবহার করেছিলেন সেটিতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে বিড়ালটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সে নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। ২৬ মিনিটের মাথায় প্রাণীটির মৃত্যু হয়। এখন জব্দ করা আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
আরও পড়ুন- গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতি হত্যার ঘটনায় মামলা
এসআই আরও জানান, থানা পুলিশ, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টগেশন (পিবিআই), সিআইডি, র্যাব-১-সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঘটনাটি তদন্ত করে আসছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করেও ঘটনার কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি।
পরীক্ষা চলছে, চলছে অনুসন্ধানও
গাছা থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম হোসেন সম্প্রতি সেখানে যোগদান করেছেন। সিআইডিতে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কর্মকর্তা জানান, ওই দম্পতির মৃত্যুর কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে কারণে তার সহকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু দিন আগে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে পরীক্ষা করা হয়। গাড়ি ও ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে তা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি আমরা প্রকাশ করব।
এ বিষয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, “নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়ায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। তবে এসব পরীক্ষার জন্য তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।”
Array