নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট: উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ সেতু। ৭ নভেম্বর (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব বর্তমানে প্রায় ২৯০ কিলোমিটার। সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমবে। জেলার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব দাঁড়াবে ২৩৫ কিলোমিটার।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক, “দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতু আগামী ৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে রানীগঞ্জ হাইস্কুলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এতে উপস্থিত থাকবেন।”
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা অমিত দেব বলেন, “এই সেতুটি চালু হলে সুনামগঞ্জবাসীকে আর সিলেট হয়ে ঘুরে ঢাকা যেতে হবে না। পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে। সময় বাঁচবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।”
তিনি আরও বলেন, “রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হলে প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় ছোট বড় অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে।”
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “সেতুটি সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করবেন। ফলে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে।”
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
৭০২ মিটার দীর্ঘ ও ১০.২৫ মিটার বক্স গার্ডার সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে পরিচিত। সেতুটির কারণে সুনামগঞ্জ ও আউশকান্দির মধ্যস্থল জগন্নাথপুর হয়ে উঠবে অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা। ইতোমধ্যে রানীগঞ্জ সেতুর পূর্বপাড়ে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদন লাভ করেছে। সেতুর পশ্চিমপাড়ে একটি ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
সূত্রমতে, দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরী হয়ে যেতে হয়। ১৯৯৮ সালে এ সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্টায় কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় আবারও সড়কের কাজ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে সড়কের ৫২ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব জানান, রানীগঞ্জ সেতু সুনামগঞ্জের উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেবে। এটি সুনামগঞ্জবাসীর কাছে পদ্মা সেতুর মতো। স্বপ্নের দৃশ্যমান এ সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স এন্ড কোম্পানি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ ছিল কিছুদিন।
সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হারুণ রশীদ জানান, চায়না কোম্পানি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় সময়মতো সেতুর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে আমরা সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করি।
তিনি বলেন, “বক্স গার্ডারসহ এই সেতুতে ১৫টি স্প্যান ও ১২টি পিয়ার রয়েছে।”
২০০৩ সালে ধলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু ছিল কোম্পানীগঞ্জের ধলাই সেতু (দীর্ঘ ৪৩৪.৩৫ মিটার)। নবনির্মিত রানীগঞ্জ সেতু দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে এ সেতুরও রেকর্ড ভাঙ্গলো।
Array